আকন্দ
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : পূরবী [ ১৯২৫ ]
কবিতার শিরনামঃ আকন্দ
![আকন্দ akondo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 2 আকন্দ akondo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-20-300x166.jpg)
আকন্দ akondo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সন্ধ্যা-আলোর সোনার খেয়া পাড়ি যখন দিল গগন-পারে
অকূল অন্ধকারে,
ছম্ছমিয়ে এল রাতি ভুবনডাঙার মাঠে
একলা আমি গোয়ালপাড়ার বাটে।
নতুন-ফোটা গানের কুঁড়ি দেব বলে দিনুর হাতে আনি
মনে নিয়ে সুরের গুন্গুনানি
চলেছিলেম, এমন সময় যেন সে কোন্ পরীর কণ্ঠখানি
বাতাসেতে বাজিয়ে দিল বিনা ভাষার বাণী;
বললে আমায়, “দাঁড়াও ক্ষণেক-তরে,
ওগো পথিক, তোমার লাগি চেয়ে আছি যুগে যুগান্তরে।
আমায় নেবে চিনে
সেই সুলগন এল এতদিনে।
পথের ধারে দাঁড়িয়ে আমি, মনে গোপন আশা
কবির ছন্দে বাঁধব আমার বাসা।”
দেখা হল, চেনা হল সাঁঝের আঁধারেতে;
বলে এলেম, “তোমার আসন কাব্যে দেব পেতে।”
সেই কথা আজ পড়ল মনে হঠাৎ হেথায় এসে
সাগরপারের দেশে;
মন-কেমনের হাওয়ার পাকে অনেক স্মৃতি বেড়ায় মনে ঘুরে,
তারি মধ্যে বাজল করুণ সুরে–
“ভুলো না গো ভুলো না এই পথ-বাসিনীর কথা,
আজও আমি দাঁড়িয়ে আছি, বাসা আমার কোথা?’
শপথ আমার, তোমরা বোলো তারে
তার কথাটি দাঁড়িয়েছিল মনের পথের ধারে,
বোলো তারে চোখের দেখা ফুটেছে আজ গানে–
লিখনখানি রাখিনু এইখানে।
আকন্দবল্লভ রবি
যেদিন প্রথম কবিগান
বসন্তের জাগালো আহ্বান
ছন্দের উৎসবসভাতলে,
সেদিন মালতী যূথী জাতি
কৌতূহলে উঠেছিল মাতি,
ছুটে এসেছিল দলে দলে।
আসিল মল্লিকা চম্পা কুরুবক কাঞ্চন করবী,
সুরের বরণমাল্যে সবারে বরিয়া নিল কবি।
কী সংকোচে এলে না যে, সভার দুয়ার হল বন্ধ।
সব পিছে রহিলে আকন্দ।
![আকন্দ akondo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 3 প্রত্যক্ষ প্রমাণ protokhyo proman [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/images-3-2.jpg)
মোরে তুমি লজ্জা কর নাই
আমার সম্মান মানি তাই,
আমারে সহজে নিলে ডাকি।
আপনারে আপনি জানালে,
উপেক্ষার ছায়ার আড়ালে
পরিচয় রাখিলে না ঢাকি।
মনে পড়ে একদিন সন্ধ্যাবেলা চলেছিনু একা,
তুমি বুঝি ভেবেছিলে কী জানি না পাই পাছে দেখা,
অদৃশ্য লিখনখানি তোমার করুণ ভীরু গন্ধ
বায়ুভরে পাঠালে আকন্দ।
হিয়া মোর উঠিল চমকি,
পথমাঝে দাঁড়ানু থমকি,
তোমারে খুঁজিনু চারি ধারে।
পল্লবের আবরণ টানি
আছিলে কাব্যের দুয়োরাণী
পথপ্রান্তে গোপন আঁধারে।
সঙ্গী যারা ছিল ঘিরে তারা সবে নামগোত্রহীন,
কাড়িতে জানে না তারা পথিকের আঁখি উদাসীন।
ভরিল আমার চিত্ত বিষ্ময়ের গভীর আনন্দ,
চিনিলাম তোমারে আকন্দ।
দেখা হয় নাই তোমা সনে
প্রাসাদের কুসুমকাননে,
জনতার প্রগল্ভ আদরে।
নিদ্রাহীন প্রদীপ-আলোকে
পড় নি অশান্ত মোর চোখে
প্রমোদের মুখর বাসরে।
অবজ্ঞার নির্জনতা তোমারে দিয়েছে কাছে আনি
সন্ধ্যার প্রথম তারা জানে তাহা, আর আমি জানি।
নিভৃতে লেগেছে প্রাণে তোমার নিশ্বাস মৃদু মন্দ
নম্রহাসি উদাসী আকন্দ!
![আকন্দ akondo [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 4 গানভঙ্গ gaanbhanga | কাহিনী [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/download-3-1.jpg)
আকাশের একবিন্দু নীলে
তোমার পরান ডুবাইলে,
শিখে নিলে আনন্দের ভাষা।
বক্ষে তব শুভ্র রেখা এঁকে
আপন স্বাক্ষর গেছে রেখে
রবির সুদূর ভালোবাসা।
দেবতার প্রিয় তুমি, গুপ্ত রাখ গৌরব তোমার–
শান্ত তুমি, তৃপ্ত তুমি, অনাদরে তোমার বিহার।
জেনেছি তোমারে, তাই জানাতে রচিনু এই ছন্দ
মৌমাছির বন্ধু হে আকন্দ!
আরও দেখুনঃ
- কখন বাদল-ছোঁওয়া [ Kokhon Badol Chhoya Lege ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- মেঘের কোলে কোলে [ Megher Kole Kole ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা [ Bojromanik Diye Gatha ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- নীল – অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায় [ Nil Anjan Ghana Punjachhayay ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- এই সকাল বেলার [ Ei Sokal Velar ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)