আত্মসমর্পণ কবিতা মানসী [atmosomorpon kobita ] টি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর মানসী কাব্যগ্রন্থের অংশ।
কাব্যগ্রন্থের নামঃ মানসী
কবিতার নামঃ আত্মসমর্পণ

আত্মসমর্পণ কবিতা মানসী। atmosomorpon kobita | মানসী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি এ কেবল মিছে বলি,
শুধু আপনার মন ছলি।
কঠিন বচন শুনায়ে তোমারে
আপন মর্মে জ্বলি।
থাক্ তবে থাক্ ক্ষীণ প্রতারণা,
কী হবে লুকায়ে বাসনা বেদনা,
যেমন আমার হৃদয়-পরান
তেমনি দেখাব খুলি।
আমি মনে করি যাই দূরে,
তুমি রয়েছ বিশ্ব জুড়ে।
যত দূরে যাই ততই তোমার
কাছাকাছি ফিরি ঘুরে।
চোখে চোখে থেকে কাছে নহ তবু,
দূরেতে থেকেও দূর নহ কভু,
সৃষ্টি ব্যাপিয়া রয়েছ তবুও
আপন অন্তঃপুরে।
আমি যেমনি করিয়া চাই,
আমি যেমনি করিয়া গাই,
বেদনাবিহীন ওই হাসিমুখ
সমান দেখিতে পাই।

ওই রূপরাশি আপনা বিকাশি
রয়েছে পূর্ণ গৌরবে ভাসি,
আমার ভিখারি প্রাণের বাসনা
হোথায় না পায় ঠাঁই।
শুধু ফুটন্ত ফুল-মাঝে
দেবী, তোমার চরণ সাজে।
অভাবকঠিন মলিন মর্ত্য
কোমল চরণে বাজে।
জেনে শুনে তবু কী ভ্রমে ভুলিয়া
আপনারে আমি এনেছি তুলিয়া,
বাহিরে আসিয়া দরিদ্র আশা
লুকাতে চাহিছে লাজে।
তবু থাক্ পড়ে ওইখানে,
চেয়ে তোমার চরণ-পানে।
যা দিয়েছি তাহা গেছে চিরকাল
আর ফিরিবে না প্রাণে।
তবে ভালো করে দেখো একবার
দীনতা হীনতা যা আছে আমার,
ছিন্ন মলিন অনাবৃত হিয়া
অভিমান নাহি জানে।
তবে লুকাব না আমি আর
এই ব্যথিত হৃদয়ভার।
আপনার হাতে চাব না রাখিতে
আপনার অধিকার।
বাঁচিলাম প্রাণে তেয়াগিয়া লাজ,
বদ্ধ বেদনা ছাড়া পেল আজ,
আশা-নিরাশায় তোমারি যে আমি
জানাইনু শত বার।
আরও দেখুনঃ
- নতুন কাল কবিতা | notunkal kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- তীর্থযাত্রিণী কবিতা | tirthojatrini kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ভাগীরথী কবিতা | bhagirothi kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- সন্ধ্যা কবিতা | sondhya kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- স্মরণ কবিতা | soron kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর