গীতালি (১৯১৪)-এর একটি প্রকৃতি-প্রাণিত কবিতা। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রূপমাধুর্যে মুগ্ধ কবি নিজের সুরসাধনার ব্যর্থতা ও অপূর্ণতাকে অনুভব করেছেন—রূপের ঘোরে হারিয়ে গিয়ে গানের সাধন অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
- কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- কাব্যগ্রন্থ: গীতালি
- কবিতার নাম: আমার সুরের সাধন রইল পড়ে
- প্রকাশকাল: ১৯১৪
- বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: প্রকৃতি, সঙ্গীত, অপূর্ণ সাধনা
আমার সুরের সাধন রইল পড়ে – কবিতার পাঠ
আমার সুরের সাধন রইল পড়ে।
চেয়ে চেয়ে কাটল বেলা
কেমন করে।
দেখি সকল অঙ্গ দিয়ে,
কী যে দেখি বলব কী এ—
গানের মতো চোখে বাজে
রূপের ঘোরে।
সবুজ সুধা এই ধরণীর
অঞ্জলিতে
কেমন করে ওঠে ভরে
আমার চিতে।
আমার সকল ভাবনাগুলি
ফুলের মতো নিল তুলি,
আশ্বিনের ওই আঁচলখানি
গেল ভরে।
ভাবার্থ
কবি এখানে স্বীকার করছেন যে তাঁর সুরসাধনা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে থেমে গেছে। চোখে ধরা পড়া রূপ যেন গানের মতো মনে বাজছে, কিন্তু তাতে সুরের চর্চা হয়নি—বরং প্রকৃতির রঙ, গন্ধ ও রূপে মন ভরে উঠেছে। আশ্বিনের স্নিগ্ধ আঁচল যেন কবির সমস্ত ভাবনাকে ফুলের মতো তুলে নিয়ে গেছে, আর সুরসাধনা অপূর্ণ থেকে গেছে।
শব্দার্থ
- সাধন: সাধনা, অনুশীলন
- রূপের ঘোরে: সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়
- সবুজ সুধা: প্রকৃতির সজীবতা ও তাজা সৌন্দর্য
- অঞ্জলি: হাতের কুঠুরি করে রাখা অংশ
- চি: চিত্ত, মন
- আঁচলখানি: শাড়ি বা বস্ত্রের প্রান্ত; এখানে রূপকভাবে প্রকৃতির কোল বা আশ্রয়