“কবে আমি বাহির হলেম” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের একটি আধ্যাত্মিক কবিতা। কবিতাটিতে কবি তাঁর অন্তর্গত ভক্তিময় যাত্রার সূচনা কবে হয়েছিল তা স্মরণ করতে গিয়ে উপলব্ধি করেন যে এই যাত্রা আজকের নয়, বহুদিনের। এখানে জীবনের স্রোত, ঝরনা, পুষ্প প্রভৃতি প্রতীকের মাধ্যমে কবি মানবজীবনের চিরন্তন ঈশ্বরসন্ধানী প্রবাহকে ব্যক্ত করেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
-
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
কাব্যগ্রন্থ: গীতাঞ্জলি (১৯১০)
-
কবিতার নাম: কবে আমি বাহির হলেম
-
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: আধ্যাত্মিকতা, ভক্তি, আত্মঅন্বেষণ
কবে আমি বাহির হলেম – কবিতার পাঠ
কবে আমি-বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে–
সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়।
ভুলে গেছি কবে থকে আসছি তোমায় চেয়ে
সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়।
ঝরনা যেমন বাহিরে যায়,
জানে না সে কাহারে চায়,
তেমনি করে ধেয়ে এলেম
জীবনধারা বেয়ে–
সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়।
কতই নামে ডেকেছি যে,
কতই ছবি এঁকেছি যে,
কোন্ আনন্দে চলেছি, তার
ঠিকানা না পেয়ে–
সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়।
পুষ্প যেমন আলোর লাগি
না জেনে রাত কাটায় জাগি,
তেমনি তোমার আশায় আমার
হৃদায় আছে ছেয়ে–
সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়।
ভাবার্থ
কবি এখানে এক অন্তহীন আধ্যাত্মিক যাত্রার কথা বলেছেন, যা কোনও নির্দিষ্ট দিনে শুরু হয়নি, বরং চিরকালীন। তিনি ঝরনার অবিরাম প্রবাহের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা করেছেন, যা অজান্তেই এক লক্ষ্যপানে ধাবিত হচ্ছে। পুষ্প যেমন আলোর আকাঙ্ক্ষায় রাতভর জেগে থাকে, তেমনি কবির হৃদয়ও অজান্তে ভরে থাকে ঈশ্বরের আশায়। কবিতাটি মানবজীবনের অন্তর্নিহিত ভক্তি, অনন্ত অনুসন্ধান এবং ঈশ্বরপ্রেমের গভীর অনুভূতি প্রকাশ করে।
শব্দার্থ
-
জীবনধারা: জীবনের অবিরাম প্রবাহ
-
ঠিকানা না পেয়ে: নির্দিষ্ট গন্তব্য বা লক্ষ্য খুঁজে না পাওয়া
-
আশায় ছেয়ে: আশা ও প্রত্যাশায় ভরপুর হয়ে থাকা