“কে বলে সব ফেলে” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি (১৯১০) কাব্যগ্রন্থের একটি দার্শনিক কবিতা। কবিতাটিতে কবি মৃত্যুকে ভয় নয়, বরং এক উৎসবমুখর যাত্রা হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, জীবনে যা অর্জন করেছি তা আমাদের সঙ্গেই থাকবে, এমনকি মৃত্যুর পরও। তাই জীবনকে অর্থপূর্ণভাবে সাজিয়ে, অহেতুক বোঝা ফেলে দিয়ে, হাসিমুখে মৃত্যুর পথে এগোনোর বার্তা দিয়েছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: গীতাঞ্জলি (১৯১০)
কবিতার নাম: কে বলে সব ফেলে
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: দার্শনিকতা, জীবনচিন্তা, মৃত্যুচিন্তা
কে বলে সব ফেলে – কবিতার পাঠ
কে বলে-সব ফেলে যাবি
মরণ হাতে ধরবে যবে।
জীবনে তুই যা নিয়েছিস
মরণে সব নিতে হবে।
এই ভরা ভাণ্ডারে এসে
শূন্য কি তুই যাবি শেষে।
নেবার মতো যা আছে তোর
ভালো করে নেই তুই তবে।
আবর্জনার অনেক বোঝা
জমিয়েছিস যে নিরবধি,
বেঁচে যাবি, যাবার বেলা
ক্ষয় করে সব যাস রে যদি।
এসেছি এই পৃথিবীতে,
হেথায় হবে সেজে নিতে,
রাজার বেশে চল্ রে হেসে
মৃত্যুপারের সে উৎসবে।
ভাবার্থ
কবি এখানে জীবনের উদ্দেশ্য ও মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে গভীর দার্শনিক ভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মৃত্যুর সময় কিছুই ফেলে যাওয়া হয় না—জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, ভালোবাসা আমাদের সঙ্গেই থাকে। তবে অপ্রয়োজনীয় বোঝা বা দুঃখ জমিয়ে রাখা অর্থহীন। তাই জীবনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে, অহেতুক ভার ঝেড়ে ফেলে, আনন্দচিত্তে মৃত্যুর অপর প্রান্তের ‘উৎসবে’ যোগ দেওয়াই প্রকৃত প্রস্তুতি।
শব্দার্থ
ভাণ্ডার: ধনভরতি স্থান, জীবনের অভিজ্ঞতা ও সঞ্চয়
আবর্জনা: অপ্রয়োজনীয় বস্তু বা মানসিক ভার
মৃত্যুপারের উৎসব: মৃত্যুর পরের আধ্যাত্মিক গন্তব্য বা মুক্তির আনন্দ