গীতহীন কবিতাটি [geetoheen kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর চৈতালী-কাব্যগ্রন্থের অংশ।
কাব্যগ্রন্থের নামঃ চৈতালী
কবিতার নামঃ গীতহীন

গীতহীন কবিতা । geetoheen Kobita | চৈতালী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চলে গেছে মোর বীণাপাণি
কতদিন হল সে না জানি।
কী জানি কী অনাদরে বিস্মৃত ধূলির ‘পরে
ফেলে রেখে গেছে বীণাখানি।
ফুটেছে কুসুমরাজি– নিখিল জগতে আজি
আসিয়াছে গাহিবার দিন,
মুখরিত দশ দিক, অশ্রান্ত পাগল পিক,
উচ্ছ্বসিত বসন্তবিপিন।
বাজিয়া উঠেছে ব্যথা, প্রাণ-ভরা ব্যাকুলতা,
মনে ভরি উঠে কত বাণী,
বসে আছি সারাদিন গীতিহীন স্তুতিহীন–
চলে গেছে মোর বীণাপাণি।

আর সে নবীন সুরে বীণা উঠিবে না পুরে,
বাজিবে না পুরানো রাগিণী;
যৌবনে যোগিনীমত, লয়ে নিত্য মৌনব্রত
তুই বীণা রবি উদাসিনী।
কে বসিবে এ আসনে মানসকমলবনে,
কার কোলে দিব তোরে আনি–
থাক্ পড়ে ওইখানে চাহিয়া আকাশপানে–
চলে গেছে মোর বীণাপাণি।
কখনো মনের ভুলে যদি এরে লই তুলে
বাজে বুকে বাজাইতে বীণা;
যদিও নিখিল ধরা বসন্তে সংগীত ভরা,
তবু আজি গাহিতে পারি না।
কথা আজি কথাসার, সুর তাহে নাহি আর,
গাঁথা ছন্দ বৃথা বলে মানি–
অশ্রুজলে ভরা প্রাণ, নাহি তাহে কলতান–
চলে গেছে মোর বীণাপাণি।
ভাবিতাম সুরে বাঁধা এ বীণা আমারি সাধা,
এ আমার দেবতার বর;
এ আমারি প্রাণ হতে মন্ত্রভরা সুধাস্রোতে
পেয়েছে অক্ষয় গীতস্বর।
একদিন সন্ধ্যালোকে অশ্রুজল ভরি চোখে
বক্ষে এরে লইলাম টানি–
আর না বাজিতে চায়, তখনি বুঝিনু হায়
চলে গেছে মোর বীণাপাণি।
আরও দেখুনঃ

- খুব তার বোলচাল কবিতা | khub tar bolchal kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- আইডিয়াল নিয়ে থাকে কবিতা | idial niye thake kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- শিমূল রাঙা রঙে চোখেরে দিল ভ’রে কবিতা | Shimul ranga ronge chokere dilo bhore | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- কাঁধে মই বলে কই ভূঁইচাপা কবিতা | kadhe moi bole koi bhuichapa | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- বলিয়াছিনু মামারে কবিতা | boliyachhinu mamare kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
