জীবন পবিত্র জানি (Jibon Pobitro Jani) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষলেখা (১৯৪১) কাব্যগ্রন্থের একটি গভীর দার্শনিক কবিতা। এখানে কবি জীবনের পবিত্রতা, তার রহস্যময় উৎস, এবং মানুষের অন্তর্লোকের ভালোবাসা ও সৃষ্টিশীলতার উৎসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শেষলেখা
কবিতার নাম: জীবন পবিত্র জানি
প্রকাশকাল: ১৯৪১
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: দার্শনিক ভাবনা, জীবনদর্শন, আধ্যাত্মিকতা
জীবন পবিত্র জানি – কবিতার পাঠ
জীবন পবিত্র জানি,
অভাব্য স্বরূপ তার
অজ্ঞেয় রহস্য-উৎস হতে
পেয়েছে প্রকাশ
কোন্ অলক্ষিত পথ দিয়ে,
সন্ধান মেলে না তার।
প্রত্যহ নূতন নির্মলতা
দিল তারে সূর্যোদয়
লক্ষ ক্রোশ হতে
স্বর্ণঘটে পূর্ণ করি আলোকের অভিষেকধারা।
সে জীবন বাণী দিল দিবসরাত্রিরে,
রচিল অরণ্যফুলে অদৃশ্যের পূজা-আয়োজন,
আরতির দীপ দিল জ্বালি
নিঃশব্দ প্রহরে।
চিত্ত তারে নিবেদিল
জন্মের প্রথম ভালোবাসা।
প্রত্যহের সব ভালোবাসা
তারি আদি সোনার কাঠিতে
উঠেছে জাগিয়া;
প্রিয়ারে বেসেছি ভালো,
বেসেছি ফুলের মঞ্জরিকে;
করেছে সে অন্তরতম
পরশ করেছে যারে।
জন্মের প্রথম গ্রন্থে নিয়ে আসে অলিখিত পাতা,
দিনে দিনে পূর্ণ হয় বাণীতে বাণীতে।
আপনার পরিচয় গাঁথা হয়ে চলে,
দিনশেষে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে ছবি,
নিজেরে চিনিতে পারে
রূপকার নিজের স্বাক্ষরে,
তার পরে মুছে ফেলে বর্ণ তার রেখা তার
উদাসীন চিত্রকর কালো কালি দিয়ে;
কিছু বা যায় না মোছা সুবর্ণের লিপি,
ধ্রুবতারকার পাশে জাগে তার জ্যোতিষ্কের লীলা।
ভাবার্থ
এই কবিতায় কবি জীবনকে এক পবিত্র, রহস্যময় এবং অলৌকিক সত্তা হিসেবে দেখেছেন। জীবনের উৎস অজ্ঞাত হলেও প্রতিদিন নতুন নির্মলতা ও সৌন্দর্যের মাধ্যমে সে নিজেকে প্রকাশ করে। ভালোবাসা, সৃষ্টিশীলতা এবং স্মৃতির ধারায় জীবন পূর্ণ হয়ে ওঠে, আর মানুষের চেতনায় নিজের পরিচয় রেখে যায়। সময়ের অবসানে কিছু চিহ্ন মুছে গেলেও, জীবনের সত্যিকারের মূল্য চিরন্তন ও অবিনাশী হয়ে থেকে যায়।
শব্দার্থ
অভাব্য: যা কল্পনার অতীত।
অজ্ঞেয়: যা জানা বা বোঝা সম্ভব নয়।
আরতি: পূজার সময়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনার আচার।
রূপকার: স্রষ্টা বা শিল্পী।
সুবর্ণের লিপি: চিরন্তন ও মূল্যবান স্মৃতি বা চিহ্ন।