তার অন্ত নাই গো , পূজা ৩১২ | Tar onto nai go

তার অন্ত নাই গো , পূজা ৩১২ | Tar onto nai go রবীন্দ্রনাথ নিজেও সুগায়ক ছিলেন। বিভিন্ন সভাসমিতিতে তিনি স্বরচিত গান পরিবেশন করতেন। কয়েকটি গান তিনি গ্রামোফোন ডিস্কেও প্রকাশ করেছিলেন। সঙ্গীত প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রবন্ধও তিনি রচনা করেন। এছাড়া স্বরচিত নাটকেও তিনি নিজের গান ব্যবহার করতেন।সঙ্গীতকে তিনি বিদ্যালয়-শিক্ষার পরিপূরক এক বিদ্যা মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তার রচিত গানগুলি বাঙালি সমাজে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

 

তার অন্ত নাই গো , পূজা ৩১২ | Tar onto nai go

রাগ: বাউল

তাল: একতাল

রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৫ বৈশাখ, ১৩২১

রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৮ এপ্রিল, ১৯১৪

 

তার অন্ত নাই গো

 

তার অন্ত নাই গো যে আনন্দে গড়া আমার অঙ্গ।

তার অণু-পরমাণু পেল কত আলোর সঙ্গ,

ও তার অন্ত নাই গো নাই।

তারে মোহনযন্ত্র দিয়ে গেছে কত ফুলের গন্ধ,

তারে দোলা দিয়ে দুলিয়ে গেছে কত ঢেউয়ের ছন্দ,

ও তার অন্ত নাই গো নাই।

আছে কত সুরের সোহাগ যে তার স্তরে স্তরে লগ্ন,

সে যে কত রঙের রসধারায় কতই হল মগ্ন,

ও তার অন্ত নাই গো নাই।

কত শুকতারা যে স্বপ্নে তাহার রেখে গেছে স্পর্শ,

কত বসন্ত যে ঢেলেছে তায় অকারণের হর্ষ,

ও তার অন্ত নাই গো নাই।

সে যে প্রাণ পেয়েছে পান করে যুগ-যুগান্তরের স্তন্য–

ভুবন কত তীর্থজলের ধারায় করেছে তায় ধন্য,

ও তার অন্ত নাই গো নাই।

সে যে সঙ্গিনী মোর, আমারে সে দিয়েছে বরমাল্য।

আমি ধন্য, সে মোর অঙ্গনে যে কত প্রদীপ জ্বালল–

ও তার অন্ত নাই গো নাই ॥

 

রবীন্দ্রসঙ্গীত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত ও সুরারোপিত গান। বাংলা সংগীতের জগতে এই গানগুলি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। রবীন্দ্রনাথের জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত। এছাড়া ভারতের জাতীয় স্তোত্র বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরম্‌ গানটিতে রবীন্দ্রনাথই সুরারোপ করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত মোট গানের সংখ্যা ২২৩২।তার গানের কথায় উপনিষদ্‌, সংস্কৃত সাহিত্য, বৈষ্ণব সাহিত্য ও বাউল দর্শনের প্রভাব সুস্পষ্ট। অন্যদিকে তার গানের সুরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের (হিন্দুস্তানি ও কর্ণাটকি উভয় প্রকার) ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুমরি, টপ্পা, তরানা, ভজন ইত্যাদি ধারার সুর এবং সেই সঙ্গে বাংলার লোকসঙ্গীত, কীর্তন, রামপ্রসাদী, পাশ্চাত্য ধ্রুপদি সঙ্গীত ও পাশ্চাত্য লোকগীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

রবীন্দ্রনাথের সকল গান গীতবিতান নামক সংকলন গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। উক্ত গ্রন্থের ১ম ও ২য় খণ্ডে রবীন্দ্রনাথ নিজেই তার গানগুলিকে ‘পূজা’, ‘স্বদেশ’, ‘প্রেম’, ‘প্রকৃতি’, ‘বিচিত্র’ও ‘আনুষ্ঠানিক’ – এই ছয়টি পর্যায়ে বিন্যস্ত করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর গীতবিতান গ্রন্থের প্রথম দুই খণ্ডে অসংকলিত গানগুলি নিয়ে ১৯৫০ সালে উক্ত গ্রন্থের ৩য় খণ্ড প্রকাশিত হয়। এই খণ্ডে প্রকাশিত গানগুলি ‘গীতিনাট্য’, ‘নৃত্যনাট্য’, ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’, ‘নাট্যগীতি’, ‘জাতীয় সংগীত’, ‘পূজা ও প্রার্থনা’, ‘আনুষ্ঠানিক সংগীত, ‘প্রেম ও প্রকৃতি’ ইত্যাদি পর্যায়ে বিন্যস্ত। ৬৪ খণ্ডে প্রকাশিত স্বরবিতান গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় গানের স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন