বসন্ত উৎসব কবিতা । পরিশেষ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । Bosonto Utsob Kabita

“বসন্ত উৎসব” কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ দিকের কাব্যগ্রন্থ পরিশেষ-এর অন্তর্ভুক্ত। এটি শান্তিনিকেতনের দোলপূর্ণিমা উদ্‌যাপনের পটভূমিতে রচিত, যেখানে ঋতুরাজ বসন্তকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রকৃতি, মানুষ ও উৎসবের আবহ একাকার হয়ে যায়। কবিতায় শালের বন, ফুলের মঞ্জরি, আবির, মাল্যপ্রদীপ, কোকিলের গান এবং শিশুদের হাসি মিলে বসন্তের মহোৎসবের এক জীবন্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে শুধু ঋতুর সৌন্দর্যই নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক, কৃতজ্ঞতা ও সৃজনসুখকেও কাব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কাব্যগ্রন্থ: পরিশেষ

  • প্রকাশকাল: ১৯৩২

  • কবিতার নাম: বসন্ত উৎসব

  • বিষয়বস্তু: বসন্ত ঋতুর আগমন, প্রকৃতির রূপ, উৎসবের আবহ, শালের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা

  • ধারা: প্রকৃতিনির্ভর উৎসবকাব্য

 

এ-বৎসর দোলপূর্ণিমা ফাল্গুন পার হয়ে চৈত্রে পৌঁছল। আমের মুকুল নিঃশেষিত, আমবাগানে মৌমাছির ভিড় নেই, পলাশ-ফোটার পালা ফুরল, গাছের তলায় শুকনো শিমূল তার শেষমধু পিঁপড়েদের বিলিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছে। কাঞ্চনশাখা প্রায় দেউলে, ঐশ্বর্যের অল্প কিছু বাকি। কেবল শালের বীথিকা ভরে উঠেছে মঞ্জরিতে। উৎসব-প্রভাতে আশ্রমকন্যারা ঋতুরাজের সিংহাসন প্রদক্ষিণ করলে এই পুষ্পিত শালের বনে, তার বল্কলে আবির মাখিয়ে দিলে, তার ছায়ায় রাখলে মাল্যপ্রদীপের অর্ঘ্য। চতুর্দশীর চাঁদ যখন অস্তদিগন্তে, প্রভাতের ললাটে যখন অরুণ-আবিরের তিলকরেখা ফুটে উঠল, তখন আমি এই ছন্দের নৈবেদ্য বসন্ত-উৎসবের বেদির জন্য রচনা করেছি।

বসন্ত উৎসব কবিতা | Bosonto utsob kobita

           আশ্রমসখা হে শাল, বনস্পতি,

                       লহো আমাদের নতি।

           তুমি এসেছিলে মোদের সবার আগে

           প্রাণের পতাকা রাঙায়ে হরিৎরাগে,

           সংগ্রাম তব কত ঝঞ্ঝার সাথে,

           কত দুর্দিনে কত দুর্যোগরাতে

                 জয়গৌরবে ঊর্ধ্বে তুলিলে শির

                       হে বীর, হে গম্ভীর।

           তোমার প্রথম অতিথি বনের পাখি,

           শাখায় শাখায় নিলে তাহাদের ডাকি,

           স্নিগ্ধ আদরে গানেরে দিয়েছ বাসা,

           মৌন তোমার পেয়েছে আপন ভাষা,

                 সুরে কিশলয়ে মিলন ঘটালে তুমি —

                       মুখরিত হল তোমার জন্মভূমি

           আমরা যেদিন আসন নিলেম আসি

           কহিল স্বাগত তব পল্লবরাশি,

           তারপর হতে পরিচয় নব নব

           দিবসরাত্রি ছায়াবীথিতলে তব

                 মিলিল আসিয়া নানা দিগ্‌দেশ হতে

                       তরুণ জীবনস্রোতে।

           বৈশাখতাপ শান্ত শীতল করো,

           নববর্ষারে করি দাও ঘনতর,

           শুভ্র শরতে জ্যোৎস্নার রেখাগুলি

           ছায়ায় মিলায়ে সাজাও বনের ধূলি,

                 মধুলক্ষ্মীরে আনিয়াছে আহ্বানি

                         মঞ্জরিভরা সুন্দর তব বাণী।

           নীরব বন্ধু, লহো আমাদের প্রীতি,

           আজি বসন্তে লহো এ কবির গীতি,

           কোকিলকাকলি শিশুদের কলরবে

           মিলেছে অS এ তব জয়-উৎসবে,

                 তোমার গন্ধে মোর আনন্দে আজি

                       এ পুণ্যদিনে অর্ঘ্য উঠিল সাজি।

           গম্ভীর তুমি, সুন্দর তুমি, উদার তোমার দান,

                   লহো আমাদের গান।

মন্তব্য করুন