“বাতাস” কবিতা (Batas Kobita) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূরবী কাব্যগ্রন্থের একটি মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি বিষয়ক রচনা, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে। কবিতাটি বাতাসকে জীবন্ত এক চরিত্রে রূপ দিয়েছে, যে গোলাপ, পাখি, নদী ও অরণ্যের সঙ্গে এক রহস্যময় সংলাপ চালায়। প্রতিটি সংলাপেই বাতাস কোনো না কোনো গভীর বার্তা বয়ে আনে—মিলন, পরিবর্তন, অসীমতার ইঙ্গিত কিংবা অজানার আভাস। এই রচনায় রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির চিরন্তন সঙ্গতি, প্রাণশক্তি ও অনুভূতির প্রবাহকে এক কাব্যিক ভাষায় তুলে ধরেছেন, যা পাঠকের মনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক গভীর আবেগময় যোগসূত্র সৃষ্টি করে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: পূরবী
প্রকাশকাল: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ
কবিতার নাম: বাতাস
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা
বাতাস – কবিতার পাঠ
গোলাপ বলে, ওগো বা’তাস, প্রলাপ তোমার বুঝতে কে বা পারে,
কেন এসে ঘা দিলে মোর দ্বারে?
বা’তাস বলে, ওগো গোলাপ, আমার ভাষা বোঝ বা নাই বোঝ,
আমি জানি কাহার পরশ খোঁজ;
সেই প্রভাতের আলো এল, আমি কেবল ভাঙিয়ে দিলাম ঘুম,
হে মোর কুসুম।
পাখি বলে, ওগো বাতা’স, কী তুমি চাও বুঝিয়ে বলো মোরে,
কুলায় আমার দুলাও কেন ভোরে?
বাতা’স বলে, ওগো পাখি, আমার ভাষা বোঝ বা নাই বোঝ,
আমি জানি তুমি কারে খোঁজ;
সেই আকাশে জাগল আলো, আমি কেবল দিনু তোমায় আনি
সীমাহীনের বাণী।
নদী বলে, ওগো বা’তাস, বুঝতে নারি কী যে তোমার কথা,
কিসের লাগি এতই চঞ্চলতা ।
বাতা’স বলে, ওগো নদী, আমার ভাষা বোঝ বা নাই বোঝ,
জানি তোমার বিলয় যেথা খোঁজ;
সেই সাগরের ছন্দ আমি এনে দিলাম তোমার বুকের কাছে,
তোমার ঢেউয়ের নাচে।
অরণ্য কয়, ওগো বাতা’স, নাহি জানি বুঝি কি নাই বুঝি
তোমার ভাষায় কাহার চরণ পূজি।
বা’তাস বলে, হে অরণ্য,আমার ভাষা বোঝ বা নাই বোঝ,
আমি জানি কাহার মিলন খোঁজ;
সেই বসন্ত এল পথে, আমি কেবল সুর জাগাতে পারি
তাহার পূর্ণতারই।
শুধায় সবে, ওগো বা’তাস, তবে তোমার আপন কথা কী যে–
বলো মোদের কী চাও তুমি নিজে।
বা’তাস বলে, আমি পথিক, আমার ভাষা বোঝ বা নাই বোঝ,
আমি বুঝি তোমরা কারে খোঁজ;
আমি শুধু যাই চলে আর সেই অজানার আভাস করি দান,
আমার শুধু গান।
ভাবার্থ
এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান—গোলাপ, পাখি, নদী, অরণ্য—এর সঙ্গে ‘বাতাস’-এর এক সংলাপ নির্মাণ করেছেন। বাতাস প্রত্যেকের কাছে আসে কোনো বার্তা বা অনুভূতি নিয়ে, যা সে নিজে বোঝে কিন্তু অন্যেরা সবসময় বুঝতে পারে না। কবি এখানে বাতাসকে জীবন্ত, অনুভূতিপূর্ণ এক চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন, যে প্রকৃতির আনন্দ, পরিবর্তন ও মিলনের বার্তা বহন করে।
শব্দার্থ
পরশ: স্পর্শ বা স্পর্শের অনুভূতি
বিলয়: মিলিয়ে যাওয়া, শেষ হয়ে যাওয়া
সীমাহীনের বাণী: অসীমের বার্তা
পূর্ণতারই: সম্পূর্ণতার