“ব্যথার বেশে এল আমার দ্বারে” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতালি (১৯১৪) কাব্যগ্রন্থের একটি গভীর ভাবসম্পন্ন কবিতা। কবি এখানে দুঃখকে ভয় না পেয়ে তাকে জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। দুঃখকে তিনি অতিথিরূপে বরণ করেছেন, যা মানুষের আত্মশক্তি, সাহস এবং ঈশ্বরবিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: গীতালি
কবিতার নাম: ব্যথার বেশে এল আমার দ্বারে
প্রকাশকাল: ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: দার্শনিক / ভক্তিমূলক
কবিতার পাঠ
ব্যথার বেশে এল আমার দ্বারে
কোন্ অতিথি, ফিরিয়ে দেব না রে।
জাগব বসে সকল রাতি—
ঝড়ের হাওয়ায় ব্যাকুল বাতি
আগুন দিয়ে জ্বালব বারে বারে।
আমার যদি শক্তি নাহি থাকে
ধরার কান্না আমায় কেন ডাকে?
দুঃখ দিয়ে জানাও, রুদ্র,
ক্ষুদ্র আমি নই তো ক্ষুদ্র—
ভয় দিয়েছ ভয় করি নে তারে।
ব্যথা যখন এল আমার দ্বারে
তারে আমি ফিরিয়ে দেব না রে।
ভাবার্থ
এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ দুঃখ বা কষ্টকে শত্রু নয়, বরং শিক্ষক ও শক্তির উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কবি মনে করেন, দুঃখ মানুষের অন্তর্নিহিত সাহস জাগ্রত করে এবং জীবনের গভীর সত্য উপলব্ধি করায়। তাই দুঃখ যখন জীবনে আসে, তখন তাকে প্রত্যাখ্যান না করে স্বাগত জানানো উচিত। তিনি কষ্টকে এমন এক অতিথির মতো দেখেছেন, যাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় না, কারণ তা মানুষের চরিত্র গঠন ও অন্তরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
শব্দার্থ
ব্যথা: দুঃখ, যন্ত্রণা
বেশে: রূপে, সাজে
অতিথি: আগন্তুক, আগত ব্যক্তি
ব্যাকুল: অস্থির, অশান্ত
রুদ্র: হিন্দু পুরাণে শিবের একটি রূপ; এখানে প্রতীকী অর্থে কঠিন পরীক্ষার প্রতীক
ক্ষুদ্র: তুচ্ছ, ছোট
দ্বার: দরজা, প্রবেশপথ