রঙিন কবিতা । পরিশেষ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । Rongin Kobita

“রঙিন” কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের কাব্যগ্রন্থ পরিশেষ-এর অন্তর্ভুক্ত। কবিতায় রঙকে ধরা হয়েছে সৃষ্টির আনন্দ, বৈচিত্র্য ও নবায়নের প্রতীক হিসেবে। এখানে প্রকৃতির রঙ, মানুষের মনের রঙ এবং ধ্যানের রঙ একত্র হয়ে জীবন ও জগতের এক সৃজনময় উৎসবকে চিত্রিত করেছে। কবি রঙকে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য হিসেবে দেখেননি; বরং তা মানুষের অন্তরের প্রেরণা ও আত্মিক উচ্ছ্বাসের রূপ নিয়েছে।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কাব্যগ্রন্থ: পরিশেষ

  • প্রকাশকাল: ১৯৩২

  • কবিতার নাম: রঙিন

  • বিষয়বস্তু: রঙের মাধ্যমে প্রকৃতি ও অন্তর্জগতের সৌন্দর্য ও সৃজনশক্তির প্রকাশ

  • ধারা: প্রকৃতি ও জীবনদর্শনভিত্তিক কাব্য

 

 

কবিতা – রঙিন

ভিড় করেছে রঙমশালীর দলে।

      কেউ-বা জলে কেউ-বা তারা স্থলে।

           অজানা দেশ, রাত্রিদিনে

           পায়ের কাছের পথটি চিনে

      দুঃসাহসে এগিয়ে তারা চলে।

      কোন্‌ মহারাজ রথের ‘পরে একা,

      ভালো করে যায় না তাঁরে দেখা।

           সূর্যতারা অন্ধকারে

           ডাইনে বাঁয়ে উঁকি মারে,

      আপন আলোয় দৃষ্টি তাদের ঠেকা।

      আমার মশাল সামনে ধরি না যে,

      তাই তো আলো চক্ষে নাহি বাজে।

           অন্তরে মোর রঙের শিখা

           চিত্তকে দেয় আপন টিকা,

      রঙিনকে তাই দেখি মনের মাঝে।

      পাখিরা রঙ ওড়ায় আকাশতলে,

      মাছেরা রঙ খেলায় গভীর জলে।

           রঙ জেগেছে বনসভায়

           গোলাপ চাঁপা রঙন জবায়,

      মেঘেরা রঙ ফোটায় পলে পলে।

      নীরব ডাকে রঙমহালের রাজা

      হুকুম করেন, “রঙের আসর সাজা।’–

           অমনি ফাগুন কোথা হতে

           ভেসে আসে হাওয়ার স্রোতে,

      পুরানোকে রাঙিয়ে করে তাজা।

      তাদের আসর বাহির-ভুবনেতে,

      ফেরে সেথায় রঙের নেশায় মেতে।

           আমার এ রঙ গোপন প্রাণে,

           আমার এ রঙ গভীর গানে,

      রঙের আসন ধেয়ানে দিই পেতে।

 

ভাবার্থ

এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ রঙকে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দুই জগতের সংযোগসূত্র হিসেবে দেখিয়েছেন। প্রকৃতির পাখি, মাছ, ফুল, মেঘ—সবাই নিজের মতো করে রঙের উৎসব সাজায়। বসন্তের হাওয়ায় পুরাতন জগৎ নতুন রঙে সেজে ওঠে। কিন্তু কবির কাছে রঙ কেবল বাইরের দৃশ্য নয়, বরং অন্তরের গভীরে জ্বলা সৃজনশিখা। ধ্যান, গান ও অনুভূতির ভেতরেই কবি তাঁর রঙের আসন পেতে দেন।

মন্তব্য করুন