“আশীর্বাদ” কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। এটি শিশুদের প্রতি স্নেহ, মঙ্গলকামনা ও সুরক্ষার এক আবেগঘন প্রার্থনা। কবি এখানে নবীন প্রাণের নিষ্পাপতা, উচ্ছ্বাস এবং জীবনের দীর্ঘ যাত্রায় তাদের জন্য শুভকামনা প্রকাশ করেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: আশীর্বাদ
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুস্নেহ, মঙ্গলকামনা, প্রার্থনা
আশীর্বাদ – কবিতার পাঠ
ইহাদের করো আশীর্বাদ।
ধরায় উঠেছে ফুটি শুভ্র প্রাণগুলি,
নন্দনের এনেছে সম্বাদ,
ইহাদের করো আশীর্বাদ।
ছোটো ছোটো হাসিমুখ জানে না ধরার দুখ,
হেসে আসে তোমাদের দ্বারে।
নবীন নয়ন তুলিকৌতুকেতে দুলি দুলি
চেয়ে চেয়ে দেখে চারি ধারে।
সোনার রবির আলো কত তার লাগে ভালো,
ভালো লাগে মায়ের বদন।
হেথায় এসেছে ভুলি, ধুলিরে জানে না ধূলি,
সবই তার আপনার ধন।
কোলে তুলে লও এরে — এ যেন কেঁদে না ফেরে,
হরষেতে না ঘটে বিষাদ।
বুকের মাঝারে নিয়ে পরিপূর্ণ প্রাণ দিয়ে
ইহাদের করো আশীর্বাদ।
নূতন প্রবাসে এসে সহস্র পথের দেশে
নীরবে চাহিছে চারি ভিতে।
এত শত লোক আছে, এসেছে তোমারি কাছে
সংসারের পথ শুধাইতে।
যেথা তুমি লয়ে যাবে কথাটি না কয়ে যাবে,
সাথে যাবে ছায়ার মতন,
তাই বলি, দেখো দেখো, এ বিশ্বাস রেখো রেখো,
পাথারে দিয়ো না বিসর্জন।
ক্ষুদ্র এ মাথার ‘পর রাখো গো করুণ কর,
ইহারে কোরো না অবহেলা।
এ ঘোর সংসার-মাঝে এসেছে কঠিন কাজে,
আসে নি করিতে শুধু খেলা।
দেখে মুখশতদল চোখে মোর আসে জল,
মনে হয় বাঁচিবে না বুঝি —
পাছে সুকুমার প্রাণ ছিঁড়ে হয় খান্-খান্
জীবনের পারাবারে বুঝি।
এই হাসিমুখগুলি হাসি পাছে যায় ভুলি,
পাছে ঘেরে আঁধার প্রমাদ!
উহাদের কাছে ডেকে বুকে রেখে কোলে রেখে
তোমরা করো গো আশীর্বাদ।
বলো, “সুখে যাও চ’লে ভবের তরঙ্গ দ’লে,
স্বর্গ হতে আসুক বাতাস।
সুখদুঃখ কোরো হেলা, সে কেবল ঢেউ-খেলা
নাচিবে তোদের চারি পাশ।’
ভাবার্থ
কবিতাটিতে কবি শিশুদের জন্য মঙ্গলকামনা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন। তিনি চান, নিষ্পাপ এই প্রাণগুলি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্টে বিপর্যস্ত না হয়, বরং সাহস, আনন্দ ও শুভ পথে এগিয়ে যাক। কবিতায় মায়ের স্নেহ, অভিভাবকের দায়িত্ব এবং সমাজের প্রতি আহ্বান একসূত্রে গাঁথা হয়েছে।
শব্দার্থ
নন্দন: স্বর্গ বা স্বর্গীয় আনন্দ
ধূলি: মাটি বা পৃথিবী
শতদল: শতপত্র বিশিষ্ট পদ্মফুল
পাথার: বিস্তৃত জলরাশি বা সাগর
ভবের তরঙ্গ: সংসারের ঢেউ