খেলা (Khela) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু কাব্যগ্রন্থের একটি প্রাণবন্ত ও স্নিগ্ধ কবিতা। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত এই কবিতায় শিশুর খেলা, হাসি, নাচ ও স্নেহময় আচরণকে মায়ের ভালোবাসা ও প্রকৃতির রঙে মিশিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। কবিতায় ছন্দ, অলঙ্কার ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে শিশুর খেলার মুহূর্তগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
-
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
-
কবিতার নাম: খেলা
-
প্রকাশকাল: ১৯০৩
-
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুর খেলা, মাতৃস্নেহ, প্রকৃতির চিত্রকল্প
খেলা – কবিতার পাঠ
তোমার কটি-তটের ধটি
কে দিল রাঙিয়া।
কোমল গায়ে দিল পরায়ে
রঙিন আঙিয়া।
বিহানবেলা আঙিনাতলে
এসেছ তুমি কী খেলাছলে,
চরণ দুটি চলিতে ছুটি
পড়িছে ভাঙিয়া।
তোমার কটি-তটের ধটি
কে দিল রাঙিয়া।
কিসের সুখে সহাস মুখে
নাচিছ বাছনি,
দুয়ার-পাশে জননী হাসে
হেরিয়া নাচনি।
তাথেই থেই তালির সাথে
কাঁকন বাজে মায়ের হাতে,
রাখাল-বেশে ধরেছ হেসে
বেণুর পাঁচনি।
কিসের সুখে সহাস মুখে
নাচিছ বাছনি।
ভিখারি ওরে, অমন ক’রে
শরম ভুলিয়া
মাগিস কী বা মায়ের গ্রীবা
আঁকড়ি ঝুলিয়া।
ওরে রে লোভী, ভুবনখানি
গগন হতে উপাড়ি আনি
ভরিয়া দুটি ললিত মুঠি
দিব কি তুলিয়া।
কী চাস ওরে অমন ক’রে
শরম ভুলিয়া।
নিখিল শোনে আকুল মনে
নূপুর-বাজনা।
তপন শশী হেরিছে বসি
তোমার সাজনা।
ঘুমাও যবে মায়ের বুকে
আকাশ চেয়ে রহে ও মুখে,
জাগিলে পরে প্রভাত করে
নয়ন-মাজনা।
নিখিল শোনে আকুল মনে
নূপুর-বাজনা।
ঘুমের বুড়ি আসিছে উড়ি
নয়ন-ঢুলানী,
গায়ের ‘পরে কোমল করে
পরশ-বুলানী।
মায়ের প্রাণে তোমারি লাগি
জগৎ-মাতা রয়েছে জাগি,
ভুবন-মাঝে নিয়ত রাজে
ভুবন-ভুলানী।
ঘুমের বুড়ি আসিছে উড়ি
নয়ন-ঢুলানী।
ভাবার্থ
কবিতায় মায়ের চোখে সন্তানের খেলার মুহূর্তগুলো ফুটে উঠেছে। শিশুর পোশাক, হাসি, নাচ, খেলা ও কৌতূহলময় আচরণ মায়ের কাছে যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আনন্দ ও সৌন্দর্যের প্রতীক। কবি এখানে শিশুর প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিকে প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে তুলনা করেছেন—যেন সে সূর্য-চন্দ্রের সাজে, আকাশের আলোয় ও বাতাসের ছোঁয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে।
শব্দার্থ
-
কটি-তট: কোমরের অংশ
-
ধটি: কোমরে বাঁধা কাপড়
-
বেণুর পাঁচনি: বাঁশির ফিতা বা ঝুল
-
ভুবন-ভুলানী: যে স্নেহে ও সৌন্দর্যে বিশ্বকে মোহিত করে
-
নূপুর: পায়ে পরার ঘুঙুর জাতীয় অলঙ্কার