খোকার রাজ্য (Khokar Rajyo) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু কাব্যগ্রন্থের একটি কল্পনাময় কবিতা, যা ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয়। এই কবিতায় কবি শিশুমনের স্বপ্নরাজ্যের বর্ণনা করেছেন—যেখানে বাস্তবতার সীমাবদ্ধতা নেই, আছে শুধু মুক্ত খেলা, রঙিন কল্পনা ও আনন্দময় সঙ্গ।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: খোকার রাজ্য
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুমন, কল্পনারাজ্য, মুক্তি ও আনন্দ
খোকার রাজ্য – কবিতার পাঠ
খোকার মনের ঠিক মাঝখানটিতে আমি যদি পারি বাসা নিতে— তবে আমি একবার জগতের পানে তার চেয়ে দেখি বসি সে নিভৃতে। তার রবি শশী তারা জানি নে কেমনধারা সভা করে আকাশের তলে, আমার খোকার সাথে গোপনে দিবসে রাতে শুনেছি তাদের কথা চলে। শুনেছি আকাশ তারে নামিয়া মাঠের পারে লোভায় রঙিন ধনু হাতে, আসি শালবন -' পরে মেঘেরা মন্ত্রণা করে খেলা করিবারে তার সাথে। যারা আমাদের কাছে নীরব গম্ভীর আছে, আশার অতীত যারা সবে, খোকারে তাহারা এসে ধরা দিতে চায় হেসে কত রঙে কত কলরবে। খোকার মনের ঠিক মাঝখান ঘেঁষে যে পথ গিয়েছে সৃষ্টিশেষে সকল-উদ্দেশ-হারা সকল-ভূগোল-ছাড়া অপরূপ অসম্ভব দেশে— যেথা আসে রাত্রিদিন সর্ব-ইতিহাস-হীন রাজার রাজত্ব হতে হাওয়া, তারি যদি এক ধারে পাই আমি বসিবারে দেখি কারা করে আসা-যাওয়া। তাহারা অদ্ভুত লোক, নাই কারো দুঃখ শোক, নেই তারা কোনো কর্মে কাজে, চিন্তাহীন মৃত্যুহীন চলিয়াছে চিরদিন খোকাদের গল্পলোক-মাঝে। সেথা ফুল গাছপালা নাগকন্যা রাজবালা যাহা খুশি তাই করে, সত্যেরে কিছু না ডরে, সংশয়েরে দিয়ে যায় ফাঁকি।
ভাবার্থ
এই কবিতায় শিশুমনের রাজ্যকে এক রহস্যময়, আনন্দপূর্ণ ও সীমাহীন কল্পলোক হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। খোকার অন্তরে রয়েছে এক অদ্ভুত জগৎ—যেখানে রবি, শশী, তারা তার সাথে কথা বলে, আকাশ ও মেঘ খেলার আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে দুঃখ-শোক নেই, মৃত্যু নেই, শুধু কল্পনা ও খেলায় ভরা এক অনন্ত আনন্দভূমি। বাস্তবতার নিয়ম সেখানে প্রযোজ্য নয়; মানুষ, পশু, পাখি, রাক্ষস, পরী—সবাই মিলেমিশে থাকে।
শব্দার্থ
ধনু: রঙধনু
সৃষ্টিশেষে: সৃষ্টির অন্তে বা সীমান্তে
গল্পলোক: কল্পনালোক বা রূপকথার দেশ
নাগকন্যা: পুরাণে উল্লিখিত সাপের দেবকন্যা
সংশয়: সন্দেহ, দ্বিধা