দুঃখহারী (Dukkhohari) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি কল্পনাময় কবিতা। এতে শিশুমনের স্বপ্ন, ভ্রমণকামনা ও প্রিয়জনদের জন্য বিরল ও মূল্যবান উপহার আনার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: দুঃখহারী
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুমন, কল্পনা, স্বপ্নযাত্রা, ভালোবাসা
দুঃখহারী – কবিতার পাঠ
মনে করো, তুমি থাকবে ঘরে,
আমি যেন যাব দেশান্তরে।
ঘাটে আমার বাঁধা আছে তরী,
জিনিসপত্র নিয়েছি সব ভরি —
ভালো করে দেখ্ তো মনে করি
কী এনে মা, দেব তোমার তরে।
চাস কি মা, তুই এত এত সোনা —
সোনার দেশে করব আনাগোনা।
সোনামতী নদীতীরের কাছে
সোনার ফসল মাঠে ফ’লে আছে,
সোনার চাঁপা ফোটে সেথায় গাছে —
না কুড়িয়ে আমি তো ফিরব না।
পরতে কি চাস মুক্তো গেঁথে হারে —
জাহাজ বেয়ে যাব সাগর-পারে।
সেখানে মা, সকালবেলা হলে
ফুলের ‘পরে মুক্তোগুলি দোলে,
টুপটুপিয়ে পড়ে ঘাসের কোলে —
যত পারি আনব ভারে ভারে।
দাদার জন্যে আনব মেঘে-ওড়া
পক্ষিরাজের বাচ্ছা দুটি ঘোড়া।
বাবার জন্যে আনব আমি তুলি
কনক-লতার চারা অনেকগুলি —
তোর তরে মা, দেব কৌটা খুলি
সাত-রাজার-ধন মানিক একটি জোড়া।
ভাবার্থ
এই কবিতায় এক শিশুর কল্পনার জগৎ উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে সে কল্পনা করে দূর দেশে ভ্রমণ করে সোনা, মুক্তো, দুর্লভ গাছপালা ও আশ্চর্যজনক প্রাণী সংগ্রহ করে প্রিয়জনদের উপহার দেবে। কবিতাটি শুধু স্বপ্ন নয়, বরং পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও যত্নের প্রকাশ। শিশুমনের নির্মলতা ও উদারতা পাঠককে মুগ্ধ করে।
শব্দার্থ
দেশান্তর: নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাত্রা
পক্ষিরাজ: পৌরাণিক ডানাওয়ালা ঘোড়া
কনক-লতা: সোনালি রঙের লতাগাছ
সাত-রাজার-ধন: বিরল ও অমূল্য সম্পদ