নৌকোযাত্রা (Noukajatra) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি কল্পনাময় ও সাহসিকতাপূর্ণ কবিতা। এতে এক শিশুর স্বপ্নময় নৌভ্রমণের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে, যেখানে সে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে রোমাঞ্চকর অভিযানে বের হওয়ার কল্পনা করে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: নৌকোযাত্রা
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: কল্পনামূলক শিশু-কবিতা, সাহসিক অভিযান, স্বপ্নযাত্রা
নৌকোযাত্রা – কবিতার পাঠ
মধু মাঝির ওই যে নৌকোখানা
বাঁধা আছে রাজগঞ্জের ঘাটে,
কারো কোনো কাজে লাগছে না তো,
বোঝাই করা আছে কেবল পাটে।
আমায় যদি দেয় তারা নৌকাটি
আমি তবে একশোটা দাঁড় আঁটি,
পাল তুলে দিই চারটে পাঁচটা ছটা —
মিথ্যে ঘুরে বেড়াই নাকো হাটে।
আমি কেবল যাই একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।
তখন তুমি কেঁদো না মা, যেন
বসে বসে একলা ঘরের কোণে —
আমি তো মা, যাচ্ছি নেকো চলে
রামের মতো চোদ্দ বছর বনে।
আমি যাব রাজপুত্রু হয়ে
নৌকো-ভরা সোনামানিক বয়ে,
আশুকে আর শ্যামকে নেব সাথে,
আমরা শুধু যাব মা তিন জনে।
আমি কেবল যাব একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।
ভোরের বেলা দেব নৌকো ছেড়ে,
দেখতে দেখতে কোথায় যাব ভেসে।
দুপুরবেলা তুমি পুকুর-ঘাটে,
আমরা তখন নতুন রাজার দেশে।
পেরিয়ে যাব তির্পুর্নির ঘাট,
পেরিয়ে যাব তেপান্তরের মাঠ,
ফিরে আসতে সন্ধে হয়ে যাবে,
গল্প বলব তোমার কোলে এসে।
আমি কেবল যাব একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।
ভাবার্থ
কবিতায় একটি শিশুর রোমাঞ্চকর নৌভ্রমণের স্বপ্নচিত্র আঁকা হয়েছে। সে চায় রাজগঞ্জ ঘাটের একটি অব্যবহৃত নৌকা নিয়ে পাল তুলে অভিযানে বের হতে। তার কল্পনায় ভেসে ওঠে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরোনোর যাত্রা, নতুন রাজার দেশে পৌঁছানো, সোনা-মানিক আনা এবং বন্ধুদের সাথে অভিযানের গল্প। শেষমেশ সে কল্পনা করে সন্ধ্যায় ফিরে এসে মায়ের কোলে বসে সেই রোমাঞ্চের কাহিনি শোনাবে। কবিতাটি শিশুমনের মুক্ত স্বপ্ন, অভিযানের আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনার অপরিসীম জগতকে তুলে ধরে।
শব্দার্থ
ঘাট: নদী বা পুকুরের ধারে নৌকা ওঠানামার সিঁড়িযুক্ত স্থান
পাট: তন্তুজাতীয় ফসল, যা থেকে দড়ি বা বস্তা তৈরি হয়
রাজপুত্রু: রাজপুত্র; রাজার পুত্র
তেরো নদীর পার: রূপক অর্থে দূরবর্তী ও অজানা জায়গা
তেপান্তরের মাঠ: সীমাহীন বা অজানা প্রান্তরের মাঠ