ফুলের ইতিহাস (Phuler Itihas) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু কাব্যগ্রন্থের একটি কাব্যময় ও প্রতীকধর্মী কবিতা, যা ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয়। এই কবিতায় জীবনের উজ্জ্বল সূচনা থেকে ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু পরিণতির একটি রূপকচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ফুলের জীবনগাথার মাধ্যমে কবি দান, ত্যাগ এবং সময়ের গতিময়তার এক আবেগঘন চিত্র এঁকেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: ফুলের ইতিহাস
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: প্রতীকবাদ, জীবনদর্শন, দান ও ত্যাগ
ফুলের ইতিহাস – কবিতার পাঠ
বসন্তপ্রভাতে এক মালতীর ফুল
প্রথম মেলিল আঁখি তার,
প্রথম হেরিল চারি ধার।
মধুকর গান গেয়ে বলে,
“মধু কই, মধু দাও দাও।”
হরষে হৃদয় ফেটে গিয়ে
ফুল বলে, “এই লও লও।”
বায়ু আসি কহে কানে কানে,
“ফুলবালা, পরিমল দাও।”
আনন্দে কাঁদিয়া কহে ফুল,
“যাহা আছে সব লয়ে যাও।”
তরুতলে চ্যুতবৃন্ত মালতীর ফুল
মুদিয়া আসিছে আঁখি তার,
চাহিয়া দেখিল চারি ধার।
মধুকর কাছে এসে বলে,
“মধু কই, মধু চাই চাই।”
ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলিয়া
ফুল বলে, “কিছু নাই নাই।”
“ফুলবালা, পরিমল দাও”
বায়ু আসি কহিতেছে কাছে।
মলিন বদন ফিরাইয়া
ফুল বলে, “আর কী বা আছে।”
ভাবার্থ
কবিতাটিতে ফুলের জন্ম, দান ও ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার মধ্য দিয়ে জীবনের পূর্ণচক্রকে রূপায়িত করা হয়েছে। বসন্তের প্রভাতে মালতীর ফুল তার সৌন্দর্য, মধু ও সুগন্ধ বিলিয়ে দেয় সবাইকে। কিন্তু সময়ের প্রবাহে, তার সব দান ফুরিয়ে যায়, অবশেষে সে হয়ে ওঠে শূন্য। এটি জীবনের প্রতীক—যেখানে জন্ম, দান, ত্যাগ এবং ক্ষয়ের এক অনিবার্য ধারা বিদ্যমান।
শব্দার্থ
মধুকর: মৌমাছি
পরিমল: সুগন্ধ
চ্যুতবৃন্ত: ডাঁটা থেকে বিচ্ছিন্ন
মলিন বদন: বিষণ্ন মুখ