শিশু কাব্যগ্রন্থের বৈজ্ঞানিক কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Boigyanik Kobita ]

বৈজ্ঞানিক (Boigyanik) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি হাস্যরসাত্মক ও কল্পনাপ্রবণ শিশুতোষ কবিতা। এতে কবি শিশুমনের কল্পনার জগৎকে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার আকারে রূপ দিয়েছেন, যেখানে ফুলগুলোকে তিনি স্কুলের ছাত্র হিসেবে কল্পনা করেছেন যারা বর্ষার শুরুতে ‘ছুটি পেয়ে’ মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসে।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • কাব্যগ্রন্থ: শিশু

  • কবিতার নাম: বৈজ্ঞানিক

  • প্রকাশকাল: ১৯০৩

  • বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুতোষ, কল্পনা ও প্রকৃতিচিত্রণ

 

 

বৈজ্ঞানিক – কবিতার পাঠ

যেম্‌নি মা গো গুরু গুরু
মেঘের পেলে সাড়া
যেম্‌নি এল আষাঢ় মাসে
বৃষ্টিজলের ধারা,

পুবে হাওয়া মাঠ পেরিয়ে
যেম্‌নি পড়ল আসি
বাঁশ-বাগানে সোঁ সোঁ ক’রে
বাজিয়ে দিয়ে বাঁশি —

অম্‌নি দেখ্‌ মা, চেয়ে —
সকল মাটি ছেয়ে
কোথা থেকে উঠল যে ফুল
এত রাশি রাশি।

তুই যে ভাবিস ওরা কেবল
অম্‌নি যেন ফুল,
আমার মনে হয় মা, তোদের
সেটা ভারি ভুল।

ওরা সব ইস্‌কুলের ছেলে,
পুঁথি-পত্র কাঁখে
মাটির নীচে ওরা ওদের
পাঠশালাতে থাকে।

ওরা পড়া করে
দুয়োর-বন্ধ ঘরে,
খেলতে চাইলে গুরুমশায়
দাঁড় করিয়ে রাখে।

বোশেখ-জষ্টি মাসকে ওরা
দুপুর বেলা কয়,
আষাঢ় হলে আঁধার ক’রে
বিকেল ওদের হয়।

ডালপালারা শব্দ করে
ঘনবনের মাঝে,
মেঘের ডাকে তখন ওদের
সাড়ে চারটে বাজে।

অমনি ছুটি পেয়ে
আসে সবাই ধেয়ে,
হলদে রাঙা সবুজ সাদা
কত রকম সাজে।

জানিস মা গো, ওদের যেন
আকাশেতেই বাড়ি,
রাত্রে যেথায় তারাগুলি
দাঁড়ায় সারি সারি।

দেখিস নে মা, বাগান ছেয়ে
ব্যস্ত ওরা কত!
বুঝতে পারিস কেন ওদের
তাড়াতাড়ি অত?

জানিস কি কার কাছে
হাত বাড়িয়ে আছে।
মা কি ওদের নেইকো ভাবিস
আমার মায়ের মতো?

ভাবার্থ

এই কবিতায় কবি ফুল ফোটার ঘটনাকে শিশুমনের কল্পনায় বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার আকার দিয়েছেন। আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি, মেঘের ডাক ও বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দের সঙ্গে ফুলের আগমনকে তিনি স্কুলের ছাত্রদের ছুটির ঘণ্টা বাজার সঙ্গে তুলনা করেছেন। শিশুসুলভ আনন্দ ও প্রকৃতির ছন্দ মিলিয়ে কবি এক মায়াবী চিত্র এঁকেছেন।

শব্দার্থ

  • আষাঢ়: বাংলা বছরের চতুর্থ মাস, বর্ষার শুরু।

  • পুঁথি-পত্র: বই ও খাতা।

  • পাঠশালা: বিদ্যালয়।

  • গুরুমশায়: শিক্ষক।

  • সাড়ে চারটে বাজা: স্কুল ছুটির সময়ের ইঙ্গিত।

মন্তব্য করুন