“ব্যাকুল” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত একটি মনোমুগ্ধকর শিশু-কবিতা। এখানে এক শিশুর নিষ্পাপ আকুলতা, মায়ের সঙ্গে তার হৃদয়ের কথোপকথন এবং বাবার চিঠি পাওয়ার আন্তরিক প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে। কাব্যটিতে শিশুমনের সরল অনুভূতি, পারিবারিক স্নেহ, আর চিঠি লেখার অদম্য ইচ্ছার সরল বর্ণনা মিশে আছে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু
প্রকাশকাল: ১৯০৩
কবিতার নাম: ব্যাকুল (Byakul)
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশু-কবিতা, পারিবারিক স্নেহ, চিঠি ও যোগাযোগ
ব্যাকুল – কবিতার পাঠ
অমন করে আছিস কেন মা গো,
খোকারে তোর কোলে নিবি না গো?
পা ছড়িয়ে ঘরের কোণে
কী যে ভাবিস আপন মনে,
এখনো তোর হয় নি তো চুল বাঁধা।
বৃষ্টিতে যায় মাথা ভিজে,
জানলা খুলে দেখিস কী যে —
কাপড়ে যে লাগবে ধুলোকাদা।
ওই তো গেল চারটে বেজে,
ছুটি হল ইস্কুলে যে —
দাদা আসবে মনে নেইকো সিটি।
বেলা অম্নি গেল বয়ে,
কেন আছিস অমন হয়ে —
আজকে বুঝি পাস নি বাবার চিঠি।
পেয়াদাটা ঝুলির থেকে
সবার চিঠি গেল রেখে —
বাবার চিঠি রোজ কেন সে দেয় না?
পড়বে ব’লে আপনি রাখে,
যায় সে চলে ঝুলি-কাঁখে,
পেয়াদাটা ভারি দুষ্টু স্যায়না।
মা গো মা, তুই আমার কথা শোন্,
ভাবিস নে মা, অমন সারা ক্ষণ।
কালকে যখন হাটের বারে
বাজার করতে যাবে পারে
কাগজ কলম আনতে বলিস ঝিকে।
দেখো ভুল করব না কোনো —
ক খ থেকে মূর্ধন্য ণ
বাবার চিঠি আমিই দেব লিখে।
কেন মা, তুই হাসিস কেন।
বাবার মতো আমি যেন
অমন ভালো লিখতে পারি নেকো,
লাইন কেটে মোটা মোটা
বড়ো বড়ো গোটা গোটা
লিখব যখন তখন তুমি দেখো।
চিঠি লেখা হলে পরে
বাবার মতো বুদ্ধি ক’রে
ভাবছ দেব ঝুলির মধ্যে ফেলে?
কক্খনো না, আপনি নিয়ে
যাব তোমায় পড়িয়ে দিয়ে,
ভালো চিঠি দেয় না ওরা পেলে।
ভাবার্থ
কবিতায় একটি শিশুর আকুল মনের চিত্র ফুটে উঠেছে, যে মায়ের মন খারাপ দেখে কারণ খুঁজতে থাকে। সে বুঝতে পারে, মা হয়তো বাবার চিঠি পাননি, আর তাই মনখারাপ। শিশুটি প্রতিশ্রুতি দেয়, আগামীতে সে নিজেই বাবার মতো চিঠি লিখবে। তার নিষ্পাপ যুক্তি, অদম্য আগ্রহ ও মাকে খুশি করার আন্তরিকতা এই কবিতাকে প্রাণবন্ত করেছে। এটি মূলত শিশুর স্নেহ-ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন এবং শৈশবের সৎ আবেগের প্রতিফলন।
শব্দার্থ
পেয়াদা: ডাক বা বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি।
ঝুলি-কাঁখে: কাঁধে ঝোলানো থলের মধ্যে।
মূর্ধন্য ণ: বাংলা বর্ণমালার একটি ব্যঞ্জনবর্ণ (ণ)।
স্যায়না: চতুর বা কৌশলী।