লুকোচুরি (Lukochuri) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু কাব্যগ্রন্থের একটি স্নিগ্ধ ও হৃদয়গ্রাহী কবিতা, যেখানে শিশুমনের কল্পনা, দুষ্টুমি এবং মায়ের সাথে তার মায়ামাখা সম্পর্কের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কবিতাটি একদিকে যেমন শৈশবের নির্ভেজাল আনন্দকে তুলে ধরে, অন্যদিকে মা-সন্তানের মায়ার বন্ধনকে উজ্জ্বল করে তোলে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু
কবিতার নাম: লুকোচুরি
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শৈশব, মাতৃস্নেহ, কল্পনা ও খেলা
লুকোচুরি – কবিতার পাঠ
আমি যদি দুষ্টুমি ক’রে
চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি,
ভোরের বেলা মা গো, ডালের ‘পরে
কচি পাতায় করি লুটোপুটি,
তবে তুমি আমার কাছে হারো,
তখন কি মা চিনতে আমায় পারো।
তুমি ডাক, “খোকা কোথায় ওরে।’
আমি শুধু হাসি চুপটি করে।
যখন তুমি থাকবে যে কাজ নিয়ে
সবই আমি দেখব নয়ন মেলে।
স্নানটি করে চাঁপার তলা দিয়ে
আসবে তুমি পিঠেতে চুল ফেলে;
এখান দিয়ে পুজোর ঘরে যাবে,
দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে —
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে।
দুপুর বেলা মহাভারত-হাতে
বসবে তুমি সবার খাওয়া হলে,
গাছের ছায়া ঘরের জানালাতে
পড়বে এসে তোমার পিঠে কোলে,
আমি আমার ছোট্ট ছায়াখানি
দোলাব তোর বইয়ের ‘পরে আনি —
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার চোখে খোকার ছায়া ভাসে।
সন্ধেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে
যখন তুমি যাবে গোয়ালঘরে
তখন আমি ফুলের খেলা খেলে
টুপ্ করে মা, পড়ব ভুঁয়ে ঝরে।
আবার আমি তোমার খোকা হব,
“গল্প বলো’ তোমায় গিয়ে কব।
তুমি বলবে, “দুষ্টু, ছিলি কোথা।’
আমি বলব, “বলব না সে কথা।’
ভাবার্থ
এই কবিতায় শিশুটি কল্পনা করে যে সে কখনো ফুল হয়ে, কখনো ছায়া হয়ে, কখনো খেলায় মগ্ন থেকে মায়ের চোখে ধরা না পড়ে লুকিয়ে থাকবে। মায়ের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে সে নিজের উপস্থিতির চিহ্ন রেখে যাবে, কিন্তু সরাসরি ধরা দেবে না। শেষে সন্ধ্যার সময় আবার সে মায়ের কোলে ফিরে আসবে। এটি শৈশবের আনন্দ, কল্পনা ও মাতৃস্নেহের এক চমৎকার রূপায়ণ।
শব্দার্থ
লুকোচুরি: লুকিয়ে থাকা ও খোঁজার খেলা।
চাঁপার গাছে চাঁপা: চাঁপা ফুল হয়ে ওঠা (কল্পনাপ্রসূত রূপক)।
মহাভারত-হাতে: মহাভারত পাঠের বই হাতে থাকা।
ছায়াখানি: ছোট্ট ছায়া।