সমব্যথী (Somobyathi) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি শিশুমনস্ক, সরল অথচ আবেগঘন কবিতা। এখানে এক শিশু তার মায়ের কাছে কৌতুকপূর্ণ প্রশ্নের মাধ্যমে জানাতে চায়, যদি সে মানুষ না হয়ে অন্য প্রাণী হতো, তবে কি মায়ের স্নেহ ও গ্রহণযোগ্যতা একই থাকত? এ প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে আছে শিশুর মমতার নিরাপত্তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: সমব্যথী
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুকাব্য, ভালোবাসা, পারিবারিক সম্পর্ক
সমব্যথী – কবিতার পাঠ
যদি খোকা না হয়ে
আমি হতেম কুকুর-ছানা —
তবে পাছে তোমার পাতে
আমি মুখ দিতে যাই ভাতে
তুমি করতে আমায় মানা?
সত্যি করে বল্
আমায় করিস নে মা, ছল —
বলতে আমায় “দূর দূর দূর।
কোথা থেকে এল এই কুকুর’?
যা মা, তবে যা মা,
আমায় কোলের থেকে নামা।
আমি খাব না তোর হাতে,
আমি খাব না তোর পাতে।
যদি খোকা না হয়ে
আমি হতেম তোমার টিয়ে,
তবে পাছে যাই মা, উড়ে
আমায় রাখতে শিকল দিয়ে?
সত্যি করে বল্
আমায় করিস নে মা, ছল–
বলতে আমায় “হতভাগা পাখি
শিকল কেটে দিতে চায় রে ফাঁকি’?
তবে নামিয়ে দে মা,
আমায় ভালোবাসিস নে মা।
আমি রব না তোর কোলে,
আমি বনেই যাব চলে।
ভাবার্থ
কবিতাটি মূলত শিশুমনের এক আবেগময় কল্পনা। কবিতার প্রথম অংশে শিশু ভাবে, যদি সে কুকুরছানা হয়ে জন্মাত, তবে কি মা তাকে কাছে টানতেন নাকি দূরে সরিয়ে দিতেন। দ্বিতীয় অংশে কল্পনায় সে হয়ে যায় একটি পোষা টিয়ে পাখি, এবং ভাবে—যদি মা তাকে উড়ে চলে যাওয়ার ভয়ে শিকলে আটকে রাখতেন, তবে কি সেটি ভালোবাসা হতো? এখানে প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে আছে শিশুর স্নেহের নিশ্চয়তা চাওয়ার প্রবল বাসনা, আর মায়ের ভালোবাসার নিরঙ্কুশতা যাচাইয়ের চেষ্টা।
শব্দার্থ
পাছে: যদি এমন হয়, আশঙ্কা প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত শব্দ।
মানা: নিষেধ করা।
ছল: ভান, কপটতা।
টিয়ে: তোতা পাখি।
শিকল: লোহার বা ধাতব চেইন।