আমার রবীন্দ্রনাথ- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে উপন্যাস, ছোটগল্প, কিশোর সাহিত্য ও রহস্যকাহিনির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব, জীবন্ত চরিত্রচিত্রণ ও কাব্যিক ভাষাশৈলীর জন্য তিনি সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য কণ্ঠস্বর। গ্রামীণ জীবন থেকে শহুরে সমাজ—সব ক্ষেত্রেই তাঁর লেখায় মানুষের অনুভূতি ও সম্পর্কের গভীরতা প্রতিফলিত হয়।

আমার রবীন্দ্রনাথ” শিরোনামের নিবন্ধে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ও ভাবনার প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত অনুরাগ ও প্রভাব। শৈশব থেকে শুরু করে লেখকজীবনের নানা পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান ও গদ্য কীভাবে তাঁর সৃজনীচিন্তা ও সাহিত্যদৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করেছে, তা তিনি আন্তরিক ভঙ্গিতে ব্যক্ত করেছেন। একজন কথাশিল্পীর দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের মানবতাবোধ, প্রকৃতিপ্রীতি ও শিল্পদর্শনকে এই লেখায় নতুনভাবে আবিষ্কার করবেন পাঠক।

 

আমার রবীন্দ্রনাথ- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

 

… শ্যাম যা ম লক্ষ্য করে, মিত্রর বাঁ-বগলে লন্ড্রীতে ধোয়ানো কাপড়, বাঁ- | হাতে বাতাসার ঠোঙা, ডান হাতে কলাপাতায় মোড়া ফুল। এখন যদি হঠাৎ মিত্রর ঘাড় কি নাক চুলকে ওঠে, তাহলে হয়তো মিত্র শ্যামকেই বলবে— দিন তো মশাই আমার ঘাড়টা (কি নাকটা) একটু চুলকে! ভাবতেই শ্যাম খুব বিনয়ের সঙ্গে হাত বাড়িয়ে বলল—আপনার ফুলটা আমার হাতে দিন ।

মিত্র ঘাড় নাড়ে—না, না। এ আমার নিত্যকর্ম মশাই, মা কাঠের সিংহাসনে একটা ঠাকুর বসিয়েছিলেন, মরবার সময় মিনমিন করে বললেন—ঠাকুরকে একটু ফুল বাতাসা দিস। আমিও রোজ দিয়ে যাই। চার-ছ’আনায় হয়ে যায় ব্যাপারটা। নইলে মশাই, ঠাকুর-দেবতায় আমার তেমন ভক্তি-শ্রদ্ধা নেই। ভগবান-টগবান আছে বলে মনে হয় আপনার? বলে উৎসুক চোখে মিত্র শ্যামের দিকে তাকায়, তারপর নিজেই বলে—আছে বোধহয় কিছু একটা, কিন্তু… বলতে বলতে গলির শেষে মিত্রর ঘরের সামনে পৌঁছে যায় তারা। মিত্র তালা খুলে ঘরে ঢুকে আলো জ্বালায়, বলে—এই আমার আস্তানা।

দেওয়ালে অনেক ঠাকুর-দেবতার ছবি টাঙানো গোটা তিনেক ক্যালেন্ডার, ইজিচেয়ার, টেবিল আর এখানে-ওখানে স্তূপীকৃত বইপত্র। জ্যোতিষ-বিদ্যার দুটো পত্রিকা বিছানায় ওলটানো। টেবিলের রবিঠাকুরের ছবিতে একটা মালা পরানো সামনে ধূপকাঠির স্ট্যান্ড। বিস্তর ধুলো জমেছে সর্বত্র। ঘরের জানালা মাত্র একটি, ভিতরের দিকে আর একটা দরজা। মিত্র বাঁ-হাতে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ডান হাতে দরজাটার ছিটকিনি নামিয়ে বলে—ভিতরটা দেখবেন নাকি!

শ্যাম বলে—থাক ।

মিত্র শ্বাস ছাড়ে—কিচেন আছে একটা, ঘুপচি একটা স্টোররুম, ফ্যামিলির কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু সব লক্ষ্মীছাড়া।

মিত্র দ্রুত ধুতি শার্ট পালটে লুঙ্গি পরে নিল, এক লহমায় ভিতরে গিয়ে চোখে-মুখে, হাতে-পায়ে জল দিয়ে এল, তারপর টেবিলের সামনে একটা আসন পেতে মেঝেতে বসে শ্যামকে হাত দেখিয়ে একটু অপেক্ষা করতে ইঙ্গিত করল। শ্যাম লক্ষ্য করে, টেবিলের নীচে ঘুপচির ভিতরে একটা কাঠের ছোট্ট পালঙ্ক। সেখানে রয়েছে পিতলের গোপাল, মাটির কালী, রামকৃষ্ণ আর সারদামণির ছবি, একদিকে আলাদা একটি পিতলের সিংহাসনে চকচক করছে শিবলিঙ্গ। ছোট থালায় গ্লাসে জল আর বাতাসা সাজিয়ে দিল মিত্র, ফুল ভাগ করে দিল সব দেবতাকে, তারপর চোখ বুজে কয়েক সেকেন্ড বসে রইল। মিত্র উঠে দাঁড়াতেই শ্যাম বলে—কী মন্ত্র বললেন ?

—বললুম, ঠাকুর খাও। মা ওই মন্ত্রই বলতেন। বলে মিত্র হালকা চালে হাসে—কিছু না মশাই, এ স্রেফ অভ্যাস। অনেকদিন ভুল করে একবার দেওয়া বাতাসা আবার দিয়েছি, জ্বরজারি হলে বিছানায় শুয়ে বলি, ঠাকুর, খাও। ঠাকুর তখন কি খায় কে জানে! তবে প্রসাদী বাতাসা আমি জমিয়ে রাখি কৌটোয়। বিকেলে মুড়ির সঙ্গে চলে যায়—হাঃ হাঃ…. মিত্র যত্নে রবিঠাকুরের ছবির সামনে ধূপকাঠি জ্বেলে দিল। শ্যাম লক্ষ্য করে, ছবির গলায় মালাটা তরতাজা। বোধহয় সকালে কেনা। সে বলে—ও মালাটা কেন ?

মিত্র লাজুক একটু হাসে—এটাও অভ্যাস বলতে পারেন। তবে—বলে একটু দ্বিধা করে মিত্র—আপনাকে বলছিলুম যে, ঠাকুরদেবতায় আমার আর ভক্তিশ্রদ্ধা নেই। কিন্তু কোথাও কোথাও কিছু একটা আছে মশাই….রবিঠাকুর…রবিঠাকুর…বলতে বলতে মিত্র আবার লাজুক একটু হাসে—সে একটা ব্যাপার আছে মশাই, আপনি ঠিক বুঝবেন না।

-কেন ?

করি । মিত্র চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে—আসলে রবিঠাকুরকে আমি খুব ভক্তিশ্রদ্ধা

—সে তো অনেকেই করে। শ্যাম হাসে।

—না, ঠিক সেরকম নয়। রবীন্দ্র-জয়ন্তীতে আমি যাই না কখনও, শান্তিনিকেতন দেখিনি, জোড়াসাঁকোরও ঠিকানা জানি না। না মশাই, রবিঠাকু’রের কবিতাও আমি খুব একটা পড়িনি, কেবল বাংলা সিলেকশনে যা ছিল তাই, আর দু-একটা ছুটকোছাটকা। পুরো কবিতা একটাও মুখস্থ নেই, তবে দু-একটা লাইন যদি বলতে বুলেন তো বলতে পারি, যেমন—রবণীর মন সহস্র বর্ষেরি সখা সাধনার ধন। কিংবা, ওগো বধূ সুন্দরী…হাঃ হাঃ…না মশাই, ঠিক আপনারা যে চোখে দেখেন, সে চোখে নয়। রবিঠাকু’র আমার কাছে অন্যরকম—একেবারে অন্যরকম। আলাদা।

মিত্র এসে শ্যামের পাশে চৌকিতে বসে, গলা সামান্য নামিয়ে বলে—বিপদে পড়লেই আমি রবিঠাকু’রকে ডাকি, মশাই। মিত্রর মুখচোখ সামান্য গম্ভীর দেখায়। বলে, ছেলেবেলা থেকেই মশাই, আমার এই অভ্যাস। ভালো মনে পড়ে না, সেই কবে ছেলেবেলায় একবার মাথায় টিকটিকি পড়েছিল বলে ভয়ে আমি দৌড় দিয়েছিলুম, দড়াম করে ধাক্কা খেয়েছিলাম বাবার পড়াশুনোর টেবিলে, কেঁদে উঠতে গিয়ে দেখি টেবিলের ওপর রবিঠাকু’রের ওই ছবি—মালা পরানো, সামনে ধূপকাঠি জ্বলছে, আমি কেঁদে বললুম—রবিঠাকু’র, আমার মাথায় টিকটিকি….তুমি তাড়িয়ে দাও।

আমার ঘন চুলের ভিতর থেকে তক্ষুনি টিকটিকির বাচ্চাটা ছিটকে পড়ল টেবিলে, তারপর দেওয়াল বেয়ে উঠে গেল। আমি শিউরে উঠলুম। হাসবেন না মশাই, আমার মনে হয়েছিল, ছবির রবিঠাকু’রের চোখেমুখে একটু হাসি ঝিকমিকিয়ে গেল। ভয়ে আমার গায়ে কাঁটা দিল, পালিয়ে গেলুম। তারপর ক্রমে আমি বুঝতে পারলুম, আমি গোপনে একটা আলাদা রবিঠাকু’রকে পেয়ে গেছি। সে আমার গোপন কথার মতো, মায়ের কাছে গায়ের জ্বর লুকিয়ে রাখার মতো করে আমি সকলের কাছ থেকে রবিঠাকু’রকে আলাদা করে নিলুম, রাত্তিরে একা অন্ধকার ঘর পেরোতে পারছি না, ডাকলুম—রবিঠাকু’র আমি অন্ধকার পেরোতে পারছি না, পার করে দাও।

 

আমার রবীন্দ্রনাথ- রবিশংকর বল
আমার রবীন্দ্রনাথ- রবিশংকর বল

 

সঙ্গে সঙ্গে মনে হত খুব আপনজনের মতো কেউ আমার হাত ধরল, আমি গটমট করে পেরিয়ে যেতুম ঘর। ঘুড়ি ধরা নিয়ে একবার খালাসীপাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মারপিট লাগলে আমি মার খেয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলুম—ঠাকু’র, রবিঠাকু’র, আমাকে এরা মারছে, তুমি আমাকে নিয়ে যাও। শুনে থমকে গিয়ে ছেলেগুলো হেসে গড়িয়ে পড়ল— রবিঠাকু’র নিয়ে যাবে কি রে, ছেলেটা। তাদের হাসির ফাঁকে গলে গিয়ে আমি টেনে দৌড় মেরেছিলুম। আমি কতবার আমাদের ফুলবাগানে ঘুরে বেড়িয়েছি রবিঠাকু’রের সঙ্গে, চলে গেছি বহু দূরের নীলকুঠিতে ফল খেতে, রেল ব্রিজ হেঁটে পার হয়ে চলে গেছি শম্ভুগঞ্জের মেলায়, মাঝিদের ফাঁকি দিয়ে পাট-বোঝাই দুদারা নৌকোর গাঁটরির ফাঁকে বসে চলে গেছি অচেনা গঞ্জে।

লোকে ভাবত, একা একা গেছে সুবোধ। কিন্তু তা নয়, আমার সঙ্গে সবসময়েই থাকত রবিঠাকু’র—ওই অতো লম্বা, মাথায় কালো ঠোঙার মতো টুপি, গায়ে জোব্বা আর দুধ-সাদা দাড়িওলা, রবিঠাকু’র সবসময়ে থাকত আমার সঙ্গে, একটু কুঁজো হয়ে নরম একখানা প্রকাণ্ড হাতে ধরে থাকত আমার হাত। আমি নিশ্চিন্তে চলে যেতুম যেখানে সেখানে, পথ হারানোর ভয় থাকত না, জানতুম রবিঠাকু’র ঠিক পৌঁছে দেবে, ঝড়ে-জলে জোব্বার আড়ালে ঘিরে রাখবে আমাকে, ঘুমের আগে শুনিয়ে দেবে রূপকথার গল্প। মা, দিদি বা ঠাকু’রমার কাছে কতবার শুনেছি, ভূতের ভয় পেলে বুকে রামনাম লিখিস। সন্ধেবেলা চার তারা না দেখে ঘরে ঢুকিস না। রাত্রে সাপের নাম করলে তিনবার আস্তিক মুনির নাম নিস। আমি সেসব মানতুম না। আমি গোপনে রবিঠাকু’রকে বলতুম—

এরা তো জানে না যে, আমার তুমি আছ! তারপর খুব হাসতুম দুজনে। আমাদের দুজনের ছিল বাদবাকী সকলের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা। না, সবসময়ে নয়, সবকিছু চাইলেই যে পাওয়া যেত তা নয়। একবার একটা ছেলে আমাদের পোষা দাঁড়ের তোতা পাখিকে ঢিল মেরেছিল বলে আমি চেঁচিয়ে বলেছিলুম—রবিঠাকু’র, ওর চোখ দুটো কানা করে দাও। তার ফলে দুদিন বাদে আমার চোখ উঠল। আর একবার আমি আমার ছোট বোনের কাছে জাঁক করে বলেছিলুম যে, আমি রাত দশটার সময় একা একা ছাদে বেড়িয়ে আসতে পারি। সে বলল, ইল্লি! সঙ্গে সঙ্গে আমি বললুম—বাজি! সে তার জমানো পয়সা বাজি ধরলে। একদিন রাত দশটায় আমি হাসতে হাসতে ছাদে চলে গেলুম। কিন্তু নামবার সময় আমাদের পোষা বেড়ালের গায়ে পা পড়তে বেড়ালটা আমাকে আঁচড়ে কামড়ে দিল।

 

আমার রবীন্দ্রনাথ- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

 

সে রাতে রবিঠাকুর আর কথা বলেনি আমার সঙ্গে; কেন না—কেন আমি জেনেশুনে বাজি ধরেছিলুম! কেন আমি ঠকিয়ে নিতে চেয়েছিলুম আমার ছোট বোনটার টিফিন না-খাওয়া, পুঁতির মালা না-কেনা কষ্টে জমানো পয়সা! হ্যাঁ, মশাই, যতক্ষণ আমি পবিত্র ও শুদ্ধ থাকতুম, ততক্ষণই রবিঠাকুর থাকত আমার সঙ্গে। ঝড়ে-জলে, আলোয়-অন্ধকারে, ঘরে কিংবা দূরে—সবসময়ে ওই অতো লম্বা, মাথায় কালো টুপি, জোব্বা পরা দাড়িওয়ালা লোকটা সব কাজ ফেলে আমার সঙ্গে থাকত।

ক্রমে মিত্রর চোখে চিকচিক করে ওঠে জল—না মশাই, আপনাদের রক্ত- মাংসের রবিঠাকুরকে আমি চোখে দেখিনি। আপনার কি মনে হয় আমার রবিঠাকুরের সঙ্গে আপনাদের রবিঠাকুরের কোনও মিল আছে?

শ্যাম মাথা নাড়ে—না ।

–আঃ! ঠিক তাই। আসলে আমিই ঠিক আসল রবিঠাকু’রকে পেয়েছিলুম মশাই। কিন্তু রাখতে পারলুম না। ক্রমে বয়স বাড়তে লাগল, গালে এল ব্রণ, ঘুমে এল অবৈধ স্বপ্ন, চলায় ফেরায় এল সতর্কতা। আমার ভিতরে মশাই পাপ ঢুকে যেতে লাগল। তখন রবিঠাকু’রের কবিতা পড়ি স্কুলে, মানে বই থেকে অর্থ দেখে নিই। কিন্তু কেবলই মনে হয় আমি যাকে চিনতুম এ সে নয়।

একদিন আমি আমাদের বাগানের কোণে শিমূল গাছতলায় বসে ঘাসের ডাঁটি দাঁতে কামড়ে আস্তে ডাকলুম— রবিঠাকু’র ! ।। কোনও সাড়া এল না। আবার ডাকলুম। সাড়া এল না। এল না তো এলই না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ডাকলুম, সকালে উঠে ডাকলুম, ছাদে গিয়ে, মাঠে গিয়ে, নৌকোয় চড়ে ডাকলুম….তারপর বসলুম…আমার গোপন কান্না কাঁদতে। গেল আমার রবিঠাকু’র, গেল আমার সাহস, শুদ্ধতা, গেল আমার শৈশব; বুকের শব্দে বিসর্জনের বাজনা শুনলুম।

মিত্রর চোখ বেয়ে, গাল বেয়ে নেমে এল জল — ঘুমের মধ্যে মায়ের কোল থেকে যেভাবে সরে যায় বাচ্চা ছেলে! তারপর থেকেই আমার জীবন একটা ট্র্যাজেডী মশাই….. বলতে বলতে আস্তে ফুঁপিয়ে ওঠে মিত্র, হাঁটু মুড়ে মুখ গুঁজে দেয়, কাঁদতে থাকে। একটা ঘোরের মধ্যে শ্যাম এগিয়ে গিয়ে মিত্রর কাছ ঘেঁষে বসে, মাথা হাত বুলিয়ে দেয়, এলোমেলোভাবে বলতে চেষ্টা করে—আমি বুঝতে পেরেছি, আমি বুঝতে পেরেছি… শ্যাম মিত্রর অস্ফুট কথা শুনতে পাচ্ছিল—রবিঠাকু’র ছাড়া আর আমার কিছু নেই—নেই। এখন আমাকে কে আবার দেবে সেই রবিঠাকু’র? কে দেবে? গভীর দুঃখে শ্যাম মাথা নাড়ে—ঠিক।

মুখ না তুলেই মিত্র বলে—সবচেয়ে বড় কথা কী জানেন!

—কী ?

—আমার আর ভালোবাসা নেই।

—ভালোবাসা নেই? শ্যাম অবুঝের মতো প্রশ্ন করে।

—নেই। আমি আর কোনওদিনই কোনও কিছুতেই তেমন করে ভালোবাসতে পারলুম না। বলেই মিত্র গভীরতর কান্নায় ডুবে যেতে লাগল।…’

(‘ঘূণপোকা’ উপন্যাস থেকে উদ্ধৃত)

মন্তব্য করুন