শৈশব সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অনন্য কাব্যগ্রন্থ, যা মূলত শিশুদের জন্য লেখা হলেও এর ভাষা, ছন্দ ও চিত্রকল্পে প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকরাও সমানভাবে মুগ্ধ হন। গ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ)। এর আগে রবীন্দ্রনাথ শিশুদের জন্য পৃথকভাবে কিছু কবিতা লিখেছিলেন, কিন্তু শৈশব সঙ্গীত ছিল শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ কাব্যসংকলন।
এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ তাঁর শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা, কল্পনার রাজ্য, পরিবার-সমাজের দৃশ্য এবং প্রকৃতির রূপকে মিশিয়ে এক জীবন্ত সাহিত্যজগৎ সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে কবি শুধু শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য নয়, বরং তাদের মনন ও সংবেদনশীলতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যও সাধন করেছেন।
গঠন ও বিষয়বস্তু
শৈশব সঙ্গীত কাব্যগ্রন্থে রয়েছে ছোটছোট ছন্দময় কবিতা, যার ভাষা সহজ, সাবলীল ও চিত্রময়। বেশিরভাগ কবিতায় হাস্যরস, খেলা, প্রকৃতির বর্ণনা এবং দৈনন্দিন জীবনের ছোট্ট ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
বাল্যজীবনের চিত্র: গ্রন্থে শৈশবের খেলা, দুষ্টুমি, ভ্রমণ, কল্পনার জগত—সবই জীবন্তভাবে ফুটে উঠেছে।
প্রকৃতিপ্রেম: ফুল, পাখি, নদী, গাছপালা ও ঋতুচক্রের বর্ণনায় কবির অসাধারণ দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে।
নৈতিক শিক্ষা: মজা ও গল্পের ছলে সততা, সাহস, সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলি তুলে ধরা হয়েছে।
ছন্দ ও সুর: শিশুপাঠের উপযোগী হালকা ছন্দ, সহজ শব্দচয়ন, এবং সুরেলা গঠন।
সাহিত্যিক গুরুত্ব
শৈশব সঙ্গীত শুধু শিশু-কিশোরদের জন্য আনন্দদায়ক পাঠ্য নয়, এটি বাংলা সাহিত্যে শিশুতোষ কবিতার ধারা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রবীন্দ্রনাথ এই গ্রন্থে প্রমাণ করেছেন যে, শিশুদের জন্য লেখা মানেই শুধুমাত্র সরল বা মজার গল্প নয়—এটি হতে পারে সমৃদ্ধ সাহিত্য।
বাংলা শিশু সাহিত্যে এর অবস্থান বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে বাংলা কবিতায় শিশুদের জন্য নতুন ধারা সূচিত হয় যা পরবর্তী লেখক-লেখিকাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
শৈশব সঙ্গীত কাব্যগ্রন্থ সূচি
৩।দিকবালা
১০।প্রভাতী
১১।কামিনী ফুল
১২।লাজময়ী
১৪।গোলাপ-বালা
১৭।পথিক
১৮।নিশীথ-চেতনা