হেঁকে উঠল ঝড় [ পুত্রপুট কাব্যগ্রন্থ ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

হেঁকে উঠল ঝড় কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “পুত্রপুট“কাব্যের অন্তর্গত। পত্রপুট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ত্তৃক রচিত একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এটি বাংলা ২৫ বৈশাখ, ১৩৪৩ (১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে) প্রকাশিত হয়। এতে সর্বমোট আঠারোটি কবিতা রয়েছে। পত্রপুট রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার অন্ত্যপর্বের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

হেঁকে উঠল ঝড় [ পুত্রপুট কাব্যগ্রন্থ ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

হেঁকে উঠল ঝড় [ পুত্রপুট কাব্যগ্রন্থ ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

হেঁকে উঠল ঝড়,
লাগাল প্রচণ্ড তাড়া,
সূর্যাস্ত-সীমার রঙিন পাঁচিল ডিঙিয়ে
ব্যস্ত বেগে বেরিয়ে পড়ল মেঘের ভিড়,
বুঝি ইন্দ্রলোকের আগুন-লাগা হাতিশালা থেকে
গাঁ গাঁ শব্দে ছুটছে ঐরাবতের কালো কালো শাবক
শুঁড় আছড়িয়ে।
মেঘের গায়ে গায়ে দগ্‌দগ্‌ করছে লাল আলো,
তার ছিন্ন ত্বকের রক্তরেখা।

বিদ্যুৎ লাফ মারছে মেঘের থেকে মেঘে,
চালাচ্ছে ঝক্‌ঝকে খাঁড়া;
বজ্রশব্দে গর্জে উঠছে দিগন্ত;
উত্তর-পশ্চিমের আমবাগানে শোনা গেল হাঁফ-ধরা
একটা আওয়াজ,
এসে পড়ল পাটকিলে রঙের অন্ধকার,
শুক্‌নো ধুলোর দম-আট্‌কানো তুফান।
ছুঁড়ে মারে টুকরো ডাল শুকনো পাতা,
চোখে মুখে ছিটোতে থাকে কাঁকরগুলো;
আকাশটা ভূতে-পাওয়া।

Where the mind is without fear | Song Offerings, Gitanjali by Rabindranath Tagore

পথিক উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মাটিতে,
ঘন আঁধির ভিতর থেকে উঠছে ঘরহারা গোরুর উতরোল ডাক,
দুরে নদীর ঘাটে হৈ হৈ রব।
বোঝা গেল না কোন্‌দিকে হুড়মুড় দুড়্‌দাড় ক’রে
কিসের ওটা ভাঙ্‌চুর।
দুর্‌দুর করে বুক,
কী হোলো, কী হোলো ভাবনা।

কাকগুলো পড়ছে মুখ থুবড়িয়ে মাটিতে,
ঠোঁট দিয়ে ঘাস ধরছে কামড়িয়ে,
ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে সরে সরে,
ঝট্‌পট্‌ করছে পাখা দুটো।

নদীপথে ঝড়ের মুখে বাঁশঝাড়ের লুটোপুটি,
ডালগুলো ডাইনে বাঁয়ে আছাড় খায়,
দোহাই পাড়ে মরিয়া হয়ে।

তীক্ষ্ণ হাওয়া সাঁই সাঁই শান দিচ্ছে আর চালাচ্ছে ছুরি
অন্ধকারের পাঁজরের ভিতর দিয়ে।
জলে স্থলে শূন্যে উঠেছে
ঘুরপাক-খাওয়া আতঙ্ক।

This is my prayer to thee, my lord | Song Offerings, Gitanjali by Rabindranath Tagore

হঠাৎ সোঁদা গন্ধের দীর্ঘনিশ্বাস উঠল মাটি থেকে,
মুহূর্তে এসে পড়ল বৃষ্টি প্রবল ঝাপ্‌টায়,
হাওয়ার চোটে গুঁড়োনো জলে ফোঁটা,
পাতলা পর্দায় ঢেকে ফেললে সমস্ত বন,
আড়াল করলে মন্দিরের চুড়ো,
কাঁসর ঘন্টার ঢং ঢং শব্দের দিল মুখচাপা।
রাত তিন পহরে থেমে গেল ঝড়বৃষ্টি,
কালী হয়ে এল অন্ধকার নিকষ পাথরের মতো;

কেবলি চল্‌ল ব্যাঙের ডাক,
ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ,
জোনাকির মিটিমিটি আলো,
আর যেন স্বপ্নে আঁৎকে-ওঠা দম্‌কা হাওয়ায়
থেকে থেকে জলঝরা ঝাউয়ের ঝর্‌ঝরানি।

শান্তিনিকেতন চৈত্র, ১৩৪০

 

Amar Rabindranath Logo

আরও দেখুন:

মন্তব্য করুন