“আমার পাচকবর-গদাধর মিশ্র” কবিতাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী সৃষ্টির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যা তাঁর খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত। খাপছাড়া মূলত হালকা মেজাজের, কৌতুকরসে ভরপুর এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে সমৃদ্ধ কবিতার সংকলন, যেখানে রবীন্দ্রনাথ জীবনের নিত্যদিনের ঘটনা, মানবস্বভাব ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে রম্যভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন।
এই কবিতায় ‘পাচকবর’ গদাধর মিশ্র চরিত্রের মাধ্যমে কবি বাঙালি জীবনের এক সহজ-সরল অথচ মজাদার রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাষার খেলায়, ছন্দের প্রাণবন্ত ব্যবহার এবং পরিস্থিতির হাস্যরসের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ পাঠককে যেমন বিনোদিত করেছেন, তেমনি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ও আচরণে সামাজিক বাস্তবতাও তুলে ধরেছেন।
পাঠকের কাছে এটি কেবল একটি রম্যকবিতা নয়—বরং রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যে তাঁর কৌতুকবোধ, ভাষা-নৈপুণ্য ও জীবনের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টির একটি মধুর প্রমাণ।
আমার পাচকবর গদাধর মিশ্র কবিতা | amar pachokbor-godadhor mishro kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার পাচকবর-গদাধর মিশ্র,
তারি ঘরে দেখি মোর কুন্তলবৃষ্য।
কহিনু তাহারে ডেকে,–
“এ শিশিটা এনেছে কে,
শোভন করিতে চাও হেঁশেলের দৃশ্য?’
সে কহিল, “বরিষার
এই ঋতু; সরিষার
কহে, “কাঠমুণ্ডার
নেপালের গুণ্ডার
এই তেলে কেটে যায় জঠরের গ্রীষ্ম।
লোকমুখে শুনেছি তো, রাজা-গোলকুণ্ডার
এই সাত্ত্বিক তেলে পূজার হবিষ্য।
আমি আর তাঁরা সবে চরকের শিষ্য।’