পূর্ণিমা কবিতা [ purnima Kobita ] টি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর চিত্রা কাব্যগ্রন্থের অংশ।
কাব্যগ্রন্থের নামঃ চিত্রা
কবিতার নামঃ পূর্ণিমা

পূর্ণিমা কবিতা । purnima Kobita | চিত্রা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পড়িতেছিলাম গ্রন্থ বসিয়া একেলা
সঙ্গীহীন প্রবাসের শূন্য সন্ধ্যাবেলা
করিবারে পরিপূর্ণ। পণ্ডিতের লেখা
সমালোচনার তত্ত্ব; পড়ে হয় শেখা
সৌন্দর্য কাহারে বলে– আছে কী কী বীজ
কবিত্বকলায়; শেলি, গেটে, কোল্রীজ
কার কোন্ শ্রেণী। পড়ি পড়ি বহুক্ষণ
তাপিয়া উঠিল শির, শ্রান্ত হল মন,
মনে হল সব মিথ্যা, কবিত্ব কল্পনা
সৌন্দর্য সুরুচি রস সকলি জল্পনা
লিপিবণিকের– অন্ধ গ্রন্থকীটগণ
বহু বর্ষ ধরি শুধু করিছে রচন
শব্দমরীচিকাজাল, আকাশের ‘পরে
অকর্ম আলস্যাবেশে দুলিবার তরে
দীর্ঘ রাত্রিদিন।

অবশেষে শ্রান্তি মানি
তন্দ্রাতুর চোখে, বন্ধ করি গ্রন্থখানি
ঘড়িতে দেখিনু চাহি দ্বিপ্রহর রাতি,
চমকি আসন ছাড়ি নিবাইনু বাতি।
যেমন নিবিল আলো, উচ্ছ্বসিত স্রোতে
মুক্ত দ্বারে, বাতায়নে, চতুর্দিক হতে
চকিতে পড়িল কক্ষে বক্ষে চক্ষে আসি
ত্রিভুবনবিপ্লাবিনী মৌন সুধাহাসি।
হে সুন্দরী, হে প্রেয়সী, হে পূর্ণপূর্ণিমা,
অনন্তের অন্তরশায়িনী, নাহি সীমা
তব রহস্যের। এ কী মিষ্ট পরিহাসে
সংশয়ীর শুষ্ক চিত্ত সৌন্দর্য-উচ্ছ্বাসে
মুহূর্তে ডুবালে। কখন দুয়ারে এসে
মুখানি বাড়ায়ে, অভিসারিকার বেশে
আছিলে দাঁড়ায়ে, এক প্রান্তে, সুররানী,
সুদূর নক্ষত্র হতে সাথে করে আনি
বিশ্বভরা নীরবতা। আমি গৃহকোণে
তর্কজালবিজড়িত ঘন বাক্যবনে
শুষ্কপত্রপরিকীর্ণ অক্ষরের পথে
একাকী ভ্রমিতেছিনু শূন্য মনোরথে
তোমারি সন্ধানে। উদ্ভ্রান্ত এ ভকতেরে
এতক্ষণ ঘুরাইলে ছলনার ফেরে।
কী জানি কেমন করে লুকায়ে দাঁড়ালে
একটি ক্ষণিক ক্ষুদ্র দীপের আড়ালে
হে বিশ্বব্যাপিনী লক্ষ্মী। মুগ্ধ কর্ণপুটে
গ্রন্থ হইতে গুটিকত বৃথা বাক্য উঠে
আচ্ছন্ন করিয়াছিল, কেমনে না জানি,
লোকলোকান্তরপূর্ণ তব মৌনবাণী।
আরও দেখুনঃ
লটারিতে পেল পীতু কবিতা | lottery te pelo pitu kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পাড়াতে এসেছে এক কবিতা | parate esechhe ek nari tepa kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আধখানা বেল কবিতা | adhkhana bel kobita | খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর