ভূমিকা (Bhumika) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের অন্যতম কবিতা। এখানে শিশুমনের খেলাধুলা, কল্পনা ও নির্ভার জগতকে সাগর তীরের এক চিত্রকল্পে তুলে ধরা হয়েছে। জীবনসাগরে শিশুদের নিষ্পাপ আনন্দ ও অজ্ঞাত বিপদের রূপকই এই কবিতার মূল সৌন্দর্য।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: ভূমিকা
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুকাব্য, রূপক, জীবনদর্শন
ভূমিকা – কবিতার পাঠ
জগৎ-পারাবারের তীরে
ছেলেরা করে মেলা।
অন্তহীন গগনতল
মাথার ‘পরে অচঞ্চল,
ফেনিল ওই সুনীল জল
নাচিছে সারা বেলা।
উঠিছে তটে কী কোলাহল–
ছেলেরা করে মেলা।
বালুকা দিয়ে বাঁধিছে ঘর,
ঝিনুক নিয়ে খেলা।
বিপুল নীল সলিল-‘পরি
ভাসায় তারা খেলার তরী
আপন হাতে হেলায় গড়ি
পাতায়-গাঁথা ভেলা।
জগৎ-পারাবারের তীরে
ছেলেরা করে খেলা।
জানে না তারা সাঁতার দেওয়া,
জানে না জাল ফেলা।
ডুবারি ডুবে মুকুতা চেয়ে,
বণিক ধায় তরণী বেয়ে,
ছেলেরা নুড়ি কুড়ায়ে পেয়ে
সাজায় বসি ঢেলা।
রতন ধন খোঁজে না তারা,
জানে না জাল ফেলা।
ফেনিয়ে উঠে সাগর হাসে,
হাসে সাগর-বেলা।
ভীষণ ঢেউ শিশুর কানে
রচিছে গাথা তরল তানে,
দোলনা ধরি যেমন গানে
জননী দেয় ঠেলা।
সাগর খেলে শিশুর সাথে,
হাসে সাগর-বেলা।
জগৎ-পারাবারের তীরে
ছেলেরা করে মেলা।
ঝঞ্ঝা ফিরে গগনতলে,
তরণী ডুবে সুদূর জলে,
মরণ-দূত উড়িয়া চলে,
ছেলেরা করে খেলা।
জগৎ-পারাবারের তীরে
শিশুর মহামেলা।
ভাবার্থ
কবিতায় সাগরতীরে শিশুদের খেলাধুলার দৃশ্যের মাধ্যমে জীবনের রূপক চিত্রিত হয়েছে। শিশুরা যেমন নির্ভার মনে বালুর ঘর বানায়, ঝিনুক কুড়িয়ে সাজায়, তেমনি মানুষও জীবনের বিশাল সাগরে নিজ নিজ আনন্দ ও ব্যস্ততায় মগ্ন থাকে, যদিও অজানা বিপদ ঘনিয়ে আসে। সাগরের হাসি, ঢেউয়ের দোল ও ঝঞ্ঝা জীবনের সুখ-দুঃখ, নিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তার প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে।
শব্দার্থ
জগৎ-পারাবার: জীবনের বিশাল সাগর, বিশ্বজগৎ।
সলিল-‘পরি: পানির উপর।
ভেলা: ভাসমান কাঠামো, পাতার বা কাঠের ভাসমান যান।
ডুবারি: মুক্তা আহরণের জন্য পানিতে ডুব দেওয়া ব্যক্তি।
ঝঞ্ঝা: প্রবল ঝড়ো হাওয়া।
মরণ-দূত: মৃত্যুর বার্তাবাহক, রূপকভাবে বিপদের প্রতীক।