শিশু কাব্যগ্রন্থের রাজার বাড়ি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । Rajar Bari Kobita

“রাজার বাড়ি” কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি কল্পনাময় শিশু-কবিতা, যেখানে কবি এক শিশুর কল্পনার রাজ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। শিশু তার মায়ের কাছে কানে কানে বলে এক রহস্যময় রাজার বাড়ির কথা—যেখানে রূপোর দেয়াল, সোনার ছাদ, সাদা হাতির দাঁতের সিঁড়ি, আর সাত রাজার ধনসম্পদ। এই বাড়িটি বাস্তবে কোথায় তা কেউ জানে না, কেবল শিশুটির কল্পনাই তাকে সেখানে পৌঁছে দেয়।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • কাব্যগ্রন্থ: শিশু

  • প্রকাশকাল: ১৯০৩

  • কবিতার নাম: রাজার বাড়ি (Rajar Bari)

  • বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশু-কবিতা, কল্পনা, রাজপ্রাসাদ, রহস্য

 

রাজার বাড়ি – কবিতার পাঠ

আমার রাজার বাড়ি কোথায় কেউ জানে না সে তো;

সে বাড়ি কি থাকত যদি লোকে জানতে পেত।

রুপো দিয়ে দেয়াল গাঁথা, সোনা দিয়ে ছাত,

থাকে থাকে সিঁড়ি ওঠে সাদা হাতির দাঁত।

সাত মহলা কোঠায় সেথা থাকেন সুয়োরানী,

সাত রাজার ধন মানিক-গাঁথা গলার মালাখানি।

আমার রাজার বাড়ি কোথায় শোন্‌ মা, কানে কানে —

ছাদের পাশে তুলসি গাছের টব আছে সেইখানে।

রাজকন্যা ঘুমোয় কোথা সাত সাগরের পারে,

আমি ছাড়া আর কেহ তো পায় না খুঁজে তারে।

দু হাতে তার কাঁকন দুটি, দুই কানে দুই দুল,

খাটের থেকে মাটির ‘পরে লুটিয়ে পড়ে চুল।

ঘুম ভেঙে তার যাবে যখন সোনার কাঠি ছুঁয়ে

হাসিতে তার মানিকগুলি পড়বে ঝ’রে ভুঁয়ে।

রাজকন্যা ঘুমোয় কোথা শোন্‌ মা, কানে কানে —

ছাদের পাশে তুলসি গাছের টব আছে যেইখানে।

তোমরা যখন ঘাটে চল স্নানের বেলা হলে

আমি তখন চুপি চুপি যাই সে ছাদে চলে।

পাঁচিল বেয়ে ছায়াখানি পড়ে মা, যেই কোণে

সেইখানেতে পা ছড়িয়ে বসি আপন মনে।

সঙ্গে শুধু নিয়ে আসি মিনি বেড়ালটাকে,

সেও জানে নাপিত ভায়া কোন্‌খানেতে থাকে।

জানিস নাপিতপাড়া কোথায়? শোন্‌ মা কানে কানে —

ছাদের পাশে তুলসি গাছের টব আছে যেইখানে।

 

ভাবার্থ

কবিতাটি এক শিশুর কল্পনার রাজ্যচিত্র। বাস্তব পৃথিবী থেকে দূরে, রাজপ্রাসাদে রুপো-সোনার আভিজাত্য, সাদা হাতির দাঁতের সিঁড়ি, সাত রাজার ধনসম্পদ এবং রহস্যময় রাজকন্যা—সবই শিশুমনের ফ্যান্টাসির জগতে বিদ্যমান। এই রাজ্যের অবস্থান প্রকাশ্য নয়; এটি কেবল শিশুর গোপন কথা, যা সে মায়ের কানে কানে বলে। রাজকন্যা সাত সাগরের পারে ঘুমিয়ে থাকে, আর শিশুটি সুযোগ পেলেই চুপি চুপি রাজপ্রাসাদের ছাদে পৌঁছে যায়—যেন এক স্বপ্নময় অভিযানের অংশ। কবিতাটি শিশুর কল্পনাশক্তি, সরলতা ও রোমাঞ্চপ্রিয়তার সুন্দর প্রকাশ।

শব্দার্থ

  • সুয়োরানী: রাজ্যের প্রধান রানী।

  • মানিক-গাঁথা: মানিকমুক্তো দিয়ে তৈরি গয়না।

  • টব: গাছ লাগানোর পাত্র।

  • মিনি বেড়াল: ছোট আকারের বেড়াল।

  • নাপিতপাড়া: নাপিতদের বসবাসের এলাকা।

মন্তব্য করুন