মা লক্ষ্মী (Ma Lakhmi) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি আবেগপূর্ণ কবিতা। এখানে শিশুমনের করুণাময় সংবেদন ও পৃথিবীর দুঃখ-দুর্দশার প্রতি সহানুভূতির চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। কবি ‘মা লক্ষ্মী’-কে করুণার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি পৃথিবীর প্রেমের ক্ষুধা মেটাতে এসেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু
কবিতার নাম: মা লক্ষ্মী
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশুসাহিত্য, করুণা ও মানবপ্রেম
মা লক্ষ্মী – কবিতার পাঠ
কার পানে মা, চেয়ে আছ
মেলি দুটি করুণ আঁখি।
কে ছিঁড়েছে ফুলের পাতা,
কে ধরেছে বনের পাখি।
কে কারে কী বলেছে গো,
কার প্রাণে বেজেছে ব্যথা–
করুণায় যে ভরে এল
দুখানি তোর আঁখির পাতা।
খেলতে খেলতে মায়ের আমার
আর বুঝি হল না খেলা।
ফুলের গুচ্ছ কোলে প’ড়ে–
কেন মা এ হেলাফেলা।
অনেক দুঃখ আছে হেথায়,
এ জগৎ যে দুঃখে ভরা–
তোমার দুটি আঁখির সুধায়
জুড়িয়ে গেল নিখিল ধরা।
লক্ষ্মী আমায় বল্ দেখি মা,
লুকিয়ে ছিলি কোন্ সাগরে।
সহসা আজ কাহার পুণ্যে
উদয় হলি মোদের ঘরে।
সঙ্গে করে নিয়ে এলি
হৃদয়-ভরা স্নেহের সুধা,
হৃদয় ঢেলে মিটিয়ে যাবি
এ জগতের প্রেমের ক্ষুধা।
থামো, থামো, ওর কাছেতে
ক’য়ো না কেউ কঠোর কথা,
করুণ আঁখির বালাই নিয়ে
কেউ কারে দিয়ো না ব্যথা।
সইতে যদি না পারে ও,
কেঁদে যদি চলে যায়–
এ-ধরণীর পাষাণ-প্রাণে
ফুলের মতো ঝরে যায়।
ও যে আমার শিশিরকণা,
ও যে আমার সাঁঝের তারা–
কবে এল কবে যাবে
এই ভয়তে হই রে সারা।
ভাবার্থ
কবিতায় ‘মা লক্ষ্মী’ এক কোমল হৃদয়ের প্রতীক, যিনি বিশ্বের দুঃখ ও বেদনায় গভীরভাবে ব্যথিত হন। তাঁর চোখের করুণার সুধা সমস্ত জগতকে সান্ত্বনা দিতে চায়। কবি সতর্ক করছেন, এই মমতাময় প্রাণীকে কষ্ট দিলে সে সহ্য করতে পারবে না, আর তার বিদায়ে পৃথিবী আরও কঠিন হয়ে উঠবে। এখানে করুণা, মমতা ও ভালোবাসার মহিমা ফুটে উঠেছে।
শব্দার্থ
করুণ আঁখি: সহানুভূতিতে ভরা চোখ।
প্রেমের ক্ষুধা: ভালোবাসার অভাব।
শিশিরকণা: কোমল ও ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্যের প্রতীক।
সাঁঝের তারা: সন্ধ্যায় উদিত উজ্জ্বল নক্ষত্র; কোমলতার রূপক।