শিশু কাব্যগ্রন্থের বিদায় কবিতা । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । Biday Kobita

“বিদায়” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি আবেগঘন কবিতা, যেখানে একটি শিশুর কল্পনার জগতে মাকে উদ্দেশ করে বিদায়ের কথা বলা হয়েছে। শিশুটি কল্পনায় নিজের অনুপস্থিতি মাকে নানা রূপে জানান দিচ্ছে—হাওয়া, জল, বাদলার গান, তারা, জ্যোৎস্না, স্বপ্ন এবং বাঁশির সুর হয়ে। কবিতাটি মাতৃস্নেহ, শিশুসুলভ কল্পনা ও আত্মিক বন্ধনের এক অপূর্ব প্রকাশ।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)

  • কবিতার নাম: বিদায়

  • বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শৈশব, মাতৃস্নেহ, কল্পনা, বিদায়ের অনুভূতি

 

 

বিদায় – কবিতার পাঠ

তবে আমি যাই গো তবে যাই

     ভোরের বেলা শূন্য কোলে

     ডাকবি যখন খোকা বলে,

বলব আমি, “নাই সে খোকা নাই।’

          মা গো, যাই।

     হাওয়ার সঙ্গে হাওয়া হয়ে

     যাব মা, তোর বুকে বয়ে,

ধরতে আমায় পারবি নে তো হাতে।

     জলের মধ্যে হব মা, ঢেউ,

     জানতে আমায় পারবে না কেউ —

স্নানের বেলা খেলব তোমার সাথে।

     বাদলা যখন পড়বে ঝরে

     রাতে শুয়ে ভাববি মোরে,

ঝর্‌ঝরানি গান গাব ওই বনে।

     জানলা দিয়ে মেঘের থেকে

     চমক মেরে যাব দেখে,

আমার হাসি পড়বে কি তোর মনে।

খোকার লাগি তুমি মা গো,

          অনেক রাতে যদি জাগ

     তারা হয়ে বলব তোমায়, “ঘুমো!’

          তুই ঘুমিয়ে পড়লে পরে

          জ্যোৎস্না হয়ে ঢুকব ঘরে,

     চোখে তোমার খেয়ে যাব চুমো।

          স্বপন হয়ে আঁখির ফাঁকে

         দেখতে আমি আসব মাকে,

     যাব তোমার ঘুমের মধ্যিখানে।

          জেগে তুমি মিথ্যে আশে

          হাত বুলিয়ে দেখবে পাশে —

     মিলিয়ে যাব কোথায় কে তা জানে।

          পুজোর সময় যত ছেলে

          আঙিনায় বেড়াবে খেলে,

     বলবে “খোকা নেই রে ঘরের মাঝে’।

          আমি তখন বাঁশির সুরে

          আকাশ বেয়ে ঘুরে ঘুরে

     তোমার সাথে ফিরব সকল কাজে।

          পুজোর কাপড় হাতে ক’রে

          মাসি যদি শুধায় তোরে,

     “খোকা তোমার কোথায় গেল চলে।’

          বলিস “খোকা সে কি হারায়,

          আছে আমার চোখের তারায়,

     মিলিয়ে আছে আমার বুকে কোলে।’

ভাবার্থ

কবিতাটিতে একটি শিশুমন মাকে উদ্দেশ করে কল্পিত বিদায়ের কথা বলে। সে বলে, মায়ের ডাক শোনার পরও সে ধরা দেবে না, কিন্তু হাওয়া, ঢেউ, মেঘ, তারা, জ্যোৎস্না, স্বপ্ন ও বাঁশির সুর হয়ে মায়ের চারপাশে থাকবে। এমনকি পুজোর সময়ও সে মায়ের সাথে অদৃশ্যভাবে যুক্ত থাকবে। এখানে মাতৃস্নেহ, শৈশবের নির্দোষ কল্পনা ও আবেগ সুন্দরভাবে মিশে গেছে।

শব্দার্থ

  • বাদলা: বৃষ্টি ভরা দিন

  • ঝর্‌ঝরানি গান: টুপটাপ বৃষ্টির শব্দের মতো সুর

  • চমক মেরে: হঠাৎ আলোর ঝলক দিয়ে

  • জ্যোৎস্না: পূর্ণিমার নরম চাঁদের আলো

  • স্বপন: স্বপ্ন

  • পুজোর কাপড়: দুর্গাপূজা বা অনুরূপ উৎসবে ব্যবহৃত নতুন পোশাক

মন্তব্য করুন