গীতালি (১৯১৪)-এর একটি রাত্রিকালীন অন্তর্গত উৎকণ্ঠা-ভরা কবিতা। নিশীথরাতের রহস্যময় ডাক, ভয় ও দুঃস্বপ্নের প্রতীকে অন্তর্জগতের টানাপোড়েনকে কবি সংযমী সুরে এঁকেছেন।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
- কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- কাব্যগ্রন্থ: গীতালি
- কবিতার নাম: সরিয়ে দিয়ে আমার ঘুমের
- প্রকাশকাল: ১৯১৪
- বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: আধ্যাত্মিক অনুভূতি, রাত্রি ও বেদনা
সরিয়ে দিয়ে আমার ঘুমের – কবিতার পাঠ
সরিয়ে দিয়ে আমার ঘুমের
পর্দাখানি
ডেকে গেল নিশীথরাতে
কে না জানি।
কোন্ গগনের দিশাহারা
তন্দ্রাবিহীন একটি তারা?
কোন্ রজনীর দুঃস্বপনের
আর্তবাণী?
ডেকে গেল নিশীথরাতে
কে না জানি।
আঁধার রাতে ভয় এসেছে
কোন্ সে নীড়ে?
বোঝাই তরী ডুবল কোথায়
পাষাণ-তীরে?
এই ধরণীর বক্ষ টুটে
এ কী রোদন এল ছুটে
আমার বক্ষে বিরামহারা
বেদন হানি?
ডেকে গেল নিশীথরাতে
কে না জানি।
ভাবার্থ
কবি গভীর রাত্রির নীরবতায় এক রহস্যময় আহ্বান অনুভব করেন—ঘুম ভাঙে, কিন্তু আহ্বানকারীর পরিচয় অজানা রয়ে যায়। তা যেন পথভ্রষ্ট কোনো তারা, দুঃস্বপ্নের আর্তবাণী বা পৃথিবীর বুকে কোনো অমোঘ বেদনার ডাক। কবিতাটি মানুষের অন্তর্জগতের অজ্ঞাত ভয়, শোক ও অদৃশ্য আহ্বানের প্রতীক—যা আমাদেরকে অস্তিত্বের গভীরতর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
শব্দার্থ
- নিশীথরাত: গভীর রাত, মধ্যরাত্রী
- দিশাহারা: দিকহীন, পথভ্রষ্ট
- আর্তবাণী: বেদনার্ত আহ্বান/ডাক
- নীড়: বাসা, আশ্রয়
- পাষাণ-তীরে: পাথুরে তট; বিপদের প্রতীক
- বিরামহারা: বিশ্রামহীন, অস্থির