আশীর্বাদ কবিতা পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ [ Ashirbad Kobita, Parishesh Kabyagrantha ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আশীর্বাদ কবিতা পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ [ Ashirbad Kobita, Parishesh Kabyagrantha ]। আশীর্বাদ কবিতাটি  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পরিশেষ-কাব্যগ্রন্থের অংশ।

আশীর্বাদ কবিতা পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ [ Ashirbad Kobita, Parishesh Kabyagrantha ]

আশীর্বাদ কবিতা –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাব্যগ্রন্থের নামঃ পরিশেষ

কবিতার শিরনামঃ আশী’র্বাদ

আশীর্বাদ-৩ কবিতা | ashirbad 3 kobita | পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-[ Rabindranath Tagore ]

আশীর্বাদ কবিতা ১

শ্রীমান দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবসে

প্রথম পঞ্চাশ বর্ষ রচি দিক প্রথম সোপান,

দ্বিতীয় পঞ্চাশ তাহে গৌরবে করুক অভ্যুত্থান।

তোমার মুখর দিন হে দিনেন্দ্র, লইয়াছে তুলি

আপনার দিগ্‌দিগন্তে রবির সংগীতরশ্মিগুলি

প্রহর করিয়া পূর্ণ। মেঘে মেঘে তারি লিপি লিখে

বিরহমিলনবাণী পাঠাইলে বহু দূর দিকে

উদার তোমার দান। রবিকর করি মর্মগত

বনস্পতি আপনার পত্রপুষ্পে করে পরিণত,

তাহারি নৈবেদ্য দিয়ে বসন্তের রচে আরাধনা

নিত্যোৎসব-সমারোহে। সেইমতো তোমার সাধনা।

 

রবির সম্পদ হত নিরর্থক, তুমি যদি তারে

না লইতে আপনার করি, যদি না দিতে সবারে।

সুরে সুরে রূপ নিল তোমা-‘পরে স্নেহ সুগভীর,

রবির সংগীতগুলি আশী’র্বাদ রহিল রবির।

আরও দেখুনঃ

Amar Rabindranath Logo

আশীর্বাদ কবিতা -২

চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে

      অভাগা যখন বেঁধেছিল তার বাসা

কোণে কোণে তারি পুঞ্জিত হল জীবনের ভাঙা আশা।

      ঘরের মধ্যে বুকের কাঁদনগুলা

           উড়িয়ে বেড়ায় ধুলা।

দুষিয়া রুষিয়া উঠে নিরুদ্ধ বায়ু,

           শোষণ করিছে আয়ু।

যেখানে-সেখানে মলিনের লাগে ছোঁওয়া,

      দীপ নিভে যায়, তীব্রগন্ধ ধোঁওয়া

           রোধ করে নিশ্বাস,

      কঠোর ভাগ্য হানে নিষ্ঠুর ভাষ।

 

ওরে দরিদ্র,চেয়ে দেখ তোর ভাঙা ভিত্তির ধারে,

      অসীম আকাশ, কে তারে রোধিতে পারে।

           সেথা নাই বন্ধন,

      প্রভাত-আলোকে প্রতিদিন আসে তব অভিনন্দন।

           সন্ধ্যার তারা তোমারি মুখেতে চাহে,

                 তোমারি মুক্তি গাহে।

      তব সত্তার মহিমা ঘোষিছে সব সত্তার মাঝে,

             হে মানব, তুমি কোথায় লুকাও লাজে।

                    যেখানে ক্ষুদ্র সেখানে পীড়িত তুমি,

           কর্কশ হাসি হাসিছে যেথায় দৈন্যের মরুভূমি

           তাহার বাহিরে তোমার উদার স্থান,

     বিশ্ব তোমারে বক্ষ মেলিয়া করিতেছে আহ্বান।

 

আশীর্বাদ-২ কবিতা | ashirbad 2 kobita | পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

আশীর্বাদ কবিতা -৩

কল্যাণীয় শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রমোহন বাগচীর সংবর্ধনা উপলক্ষে

আমরা তো আজ পুরাতনের কোঠায়,

           নবীন বটে ছিলেম কোনো কালে।

বসন্তে আজ কত নূতন বোঁটায়

           ধরল কুঁড়ি বাণীবনের ডালে।

কত ফুলের যৌবন যায় চুকে

           একবেলাকার মৌমাছিদের প্রেমে,

মধুর পালা রেণুকণার মুখে

           ঝরা পাতায় ক্ষণিকে যায় থেমে।

 

ফাগুনফুলে ভরেছিলে সাজি,

           শ্রাবণমাসে আনো ফলের ভিড়।

সেতারেতে ইমন উঠে বাজি

           সুরবাহারে দিক কানাড়ার মিড়।

 

আরও দেখুনঃ

Amar Rabindranath Logo

আশীর্বাদ কবিতা -৪

শ্রীমতী কল্পনা দেবীর প্রতি

সুন্দর ভক্তির ফুল অলক্ষ্যে নিভৃত তব মনে

যদি ফুটে থাকে মোর কাব্যের দক্ষিণ সমীরণে,

হে শোভনে, আজি এই নির্মল কোমল গন্ধ তার

দিয়েছ দক্ষিণা মোরে, কবির গভীর পুরস্কার।

 

লহো আশীর্বাদ বৎসে, আপন গোপন অন্তঃপুরে

ছন্দের নন্দনবন সৃষ্টি করো সুধাস্নিগ্ধ সুরে, —

বঙ্গের নন্দিনী তুমি, প্রিয়জনে করো আনন্দিত,

প্রেমের অমৃত তব ঢেলে দিক গানের অমৃত।

 

Amar Rabindranath Logo

 

আশীর্বাদ কবিতা -৫

 

শ্রীমতী লীলা দেবী কল্যাণীয়াসু

           বিশ্ব-পানে বাহির হবে

                       আপন কারা টুটি —

           এই সাধনায় কুঁড়ি ওঠে

                       কুসুম হয়ে ফুটি।

           বীজ আপনার বাঁধন ছিঁড়ে

                       ফলেরে দেয় সাড়া।

           সূর্যতারা আঁধার চিরে

                       জ্যোতিরে দেয় ছাড়া।

           এই সাধনায় যোগযুক্ত

                       সাধু তাপসবর

           মৃত্যু হতে করেন মুক্ত

                       অমৃতনির্ঝর।

 

           এই সাধনায় বিশ্বকবির

                       আনন্দবীন বাজে —

           আপ্‌নারে দেয় উৎস্রাবিয়া

                       আপন সৃষ্টি-মাঝে।

           সেই ফল পাও প্রেমের যোগে

                       পুণ্য মিলনব্রতে;

           আপ্‌নারে দাও ছুটি তুমি

                       আপন বন্ধ হতে।

           আত্মভোলা দুইটি প্রাণে

                       মিলবে একাকার,

           সেই মিলনে বিকাশ হবে

                       নূতন সংসার।

 

আশীর্বাদ কবিতা -৬

কল্যাণীয়া অমলিনার প্রথম বার্ষিক জন্মদিনে

তোমারে জননী ধরা

দিল রূপে রসে ভরা

      প্রাণের প্রথম পাত্রখানি,

তাই নিয়ে তোলাপাড়া

ফেলাছড়া নাড়াচড়া

     অর্থ তার কিছুই না জানি।

কোন্‌ মহারঙ্গশালে

নৃত্য চলে তালে তালে,

     ছন্দ তারি লাগে রক্তে তব।

অকারণ কলরোলে

তাই তব অঙ্গ দোলে,

ভঙ্গি তার নিত্য নব নব।

চিন্তা-আবরণ-হীন

নগ্নচিত্ত সারাদিন

     লুটাইছে বিশ্বের প্রাঙ্গণে,

ভাষাহীন ইশারায়

ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যায়

     যাহা-কিছু দেখে আর শোনে।

অস্ফুট ভাবনা যত

অশথপাতার মতো

     কেবলই আলোয় ঝিলিমিলি।

কী হাসি বাতাসে ভেসে

তোমারে লাগিছে এসে,

     হাসি বেজে ওঠে খিলিখিলি।

গ্রহ তারা শশী রবি

সমুখে ধরেছে ছবি

     আপন বিপুল পরিচয়।

কচি কচি দুই হাতে

খেলিছ তাহারি সাথে,

       নাই প্রশ্ন, নাই কোনো ভয়।

তুমি সর্ব দেহে মনে

ভরি লহ প্রতিক্ষণে

       যে সহজ আনন্দের রস,

যাহা তুমি অনায়াসে

ছড়াইছ চারিপাশে

       পুলকিত দরশ পরশ,

আমি কবি তারি লাগি

আপনার মনে জাগি,

       বসে থাকি জানালার ধারে।

অমরার দূতীগুলি

অলক্ষ্য দুয়ার খুলি

       আসে যায় আকাশের পারে।

দিগন্তে নীলিম ছায়া

রচে দূরান্তের মায়া,

       বাজে সেথা কী অশ্রুত বেণু।

মধ্যদিন তন্দ্রাতুর

শুনিছে রৌদ্রের সুর,

       মাঠে শুয়ে আছে ক্লান্ত ধেনু।

চোখের দেখাটি দিয়ে

দেহ মোর পায় কী এ,

       মন মোর বোবা হয়ে থাকে।

সব আছে আমি আছি,

দুইয়ে মিলে কাছাকাছি

       আমার সকল-কিছু ঢাকে।

যে আশ্বাসে মর্ত্যভূমি

হে শিশু, জাগাও তুমি,

       যে নির্মল যে সহজ প্রাণে,

কবির জীবনে তাই

যেন বাজাইয়া যাই

       তারি বাণী মোর যত গানে।

ক্লান্তিহীন নব আশা

সেই তো শিশুর ভাষা

       সেই ভাষা প্রাণদেবতার,

জরার জড়ত্ব ত্যেজে

নব নব জন্মে সে যে

       নব প্রাণ পায় বারম্বার।

নৈরাশ্যের কুহেলিকা

উষার আলোকটিকা

       ক্ষণে ক্ষণে মুছে দিতে চায়,

বাধার পশ্চাতে কবি

দেখে চিরন্তন-রবি

       সেই দেখা শিশুচক্ষে ভায়।

শিশুর সম্পদ বয়ে

এসেছ এ লোকালয়ে,

       সে সম্পদ থাক্‌ অমলিনা।

যে-বিশ্বাস দ্বিধাহীন

তারি সুরে চিরদিন

       বাজে যেন জীবনের বীণা।

Amar Rabindranath Logo

 

আশীর্বাদ কবিতা -৭

তরুণ আশী’র্বাদপ্রাথী’র প্রতি প্রাচীন কবির নিবেদন

        শ্রীযুক্ত দিলীপকুমার রায়ের উদ্দেশে

নিম্নে সরোবর স্তব্ধ হিমাদ্রির উপত্যকাতলে।

ঊর্ধ্বে গিরিশৃঙ্গ হতে শ্রান্তিহীন সাধনার বলে

তরুণ নির্ঝর ধায় সিন্ধুসনে মিলনের লাগি

অরুণোদয়ের পথে। সে কহিল, “আশী’র্বাদ মাগি

হে প্রাচীন সরোবর।’ সরোবর কহিল হাসিয়া,

“আশিস তোমারি তরে নীলাম্বরে উঠে উদ্ভাসিয়া

প্রভাতসূর্যের করে; ধ্যানমগ্ন গিরিতপস্বীর

বিগলিত করুণার প্রবাহিত আশী’র্বাদনীর

তোমারে দিতেছে প্রাণধারা। আমি বনচ্ছায়া হতে,

নির্জনে একান্তে বসি, দেখি নির্বারিত স্রোতে

সংগীত-উদ্‌বেল নৃত্যে প্রতিক্ষণে করিতেছ জয়

মসীকৃষ্ণ বিঘ্নপুঞ্জ, পথরোধী পাষাণসঞ্চয়,

গূঢ় জড় শত্রুদল। এই তব যাত্রার প্রবাহ

আপনার গতিবেগে আপনার জাগায় উৎসাহ।’

 

Amar Rabindranath Logo

 

আশীর্বাদ কবিতা -৮

শ্রীমান অতুলপ্রসাদ সেন

করকমলে —

বঙ্গের দিগন্ত ছেয়ে বাণীর বাদল

বহে যায় শতস্রোতে রসবন্যাবেগে;

কভু বজ্রবহ্নি কভু স্নিগ্ধ অশ্রুজল

ধ্বনিছে সংগীতে ছন্দে তারি পুঞ্জমেঘে;

বঙ্কিম শশাঙ্ককলা তারি মেঘজটা

চুম্বিয়া মঙ্গলমন্ত্রে রচে স্তরে স্তরে

সুন্দরের ইন্দ্রজাল; কত রশ্মিচ্ছটা

প্রত্যুষে দিনের অন্তে রাখে তারি ‘পরে

আলোকের স্পর্শমণি। আজি পূর্ববায়ে

বঙ্গের অম্বর হতে দিকে দিগন্তরে

সহর্ষ বর্ষণধারা গিয়েছে ছড়ায়ে

প্রাণের আনন্দবেগে পশ্চিমে উত্তরে;

দিল বঙ্গবীণাপাণি অতুলপ্রসাদ,

তব জাগরণী গানে নিত্য আশী-র্বাদ।

Amar Rabindranath Logo

 

আশীর্বাদ কবিতা -৯

শ্রীমান অতুলপ্রসাদ সেন

করকমলে —

বঙ্গের দিগন্ত ছেয়ে বাণীর বাদল

বহে যায় শতস্রোতে রসবন্যাবেগে;

কভু বজ্রবহ্নি কভু স্নিগ্ধ অশ্রুজল

ধ্বনিছে সংগীতে ছন্দে তারি পুঞ্জমেঘে;

বঙ্কিম শশাঙ্ককলা তারি মেঘজটা

চুম্বিয়া মঙ্গলমন্ত্রে রচে স্তরে স্তরে

সুন্দরের ইন্দ্রজাল; কত রশ্মিচ্ছটা

প্রত্যুষে দিনের অন্তে রাখে তারি ‘পরে

আলোকের স্পর্শমণি। আজি পূর্ববায়ে

বঙ্গের অম্বর হতে দিকে দিগন্তরে

সহর্ষ বর্ষণধারা গিয়েছে ছড়ায়ে

প্রাণের আনন্দবেগে পশ্চিমে উত্তরে;

দিল বঙ্গবীণাপাণি অতুলপ্রসাদ,

তব জাগরণী গানে নিত্য আশীর্বাদ।

 

Amar Rabindranath Logo

 

 

মন্তব্য করুন