কঙ্কাল
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : পূরবী [ ১৯২৫ ]
কবিতার শিরনামঃ কঙ্কাল
![কঙ্কাল konkal [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 2 কঙ্কাল konkal [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/download-6-300x162.jpg)
Table of Contents
কঙ্কাল konkal [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পশুর কঙ্কাল ওই মাঠের পথের এক পাশে
পড়ে আছে ঘাসে–
যে ঘাস একদা তারে দিয়েছিল বল,
দিয়েছিল বিশ্রাম কোমল।
পড়ে আছে পাণ্ডু অস্থিরাশি
কালের নীরস অট্টহাসি।
সে যেন রে মরণের অঙ্গুলিনির্দেশ–
ইঙ্গিতে কহিছে মোরে, “একদা পশুর যেথা শেষ,
সেথায় তোমারও অন্ত, ভেদ নাহি লেশ।
তোমারও প্রাণের সুরা ফুরাইলে পরে
ভাঙা পাত্র পড়ে রবে অমনি ধুলায় অনাদরে।’
আমি বলিলাম, “মৃত্যু, করি না বিশ্বাস
তব শূন্যতার উপহাস।
মোর নহে শুধুমাত্র প্রাণ
সর্ব বিত্ত রিক্ত করি যার হয় যাত্রা অবসান;
যাহা ফুরাইলে দিন
শূন্য অস্থি দিয়ে শোধে আহারনিদ্রার শেষ ঋণ।’
ভেবেছি জেনেছি যাহা, বলেছি শুনেছি যাহা কানে,
সহসা গেয়েছি যাহা গানে,
ধরে নি তা মরণের বেড়া-ঘেরা প্রাণে।
যা পেয়েছি, যা করেছি দান
মর্তে তার কোথা পরিমাণ।
![কঙ্কাল konkal [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 3 গানভঙ্গ gaanbhanga | কাহিনী [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2022/04/download-2-1.jpg)
আমার মনের নৃত্য, কতবার জীবন-মৃত্যুরে
লঙ্ঘিয়া চলিয়া গেছে চিরসুন্দরের সুরপুরে।
চিরকাল-তরে সে কি থেমে যাবে শেষে
কঙ্কালের সীমানায় এসে।
যে আমার সত্য পরিচয়
মাংসে তার পরিমাপ নয়;
পদাঘাতে জীর্ণ তারে নাহি করে দণ্ডপলগুলি–
সর্বস্বান্ত নাহি করে পথপ্রান্তে ধূলি।
আমি যে রূপের পদ্মে করেছি অরূপমধু পান,
দুঃখের বক্ষের মাঝে আনন্দের পেয়েছি সন্ধান,
অনন্ত মৌনের বাণী শুনেছি অন্তরে,
দেখেছি জ্যোতির পথ শূন্যময় আঁধারপ্রান্তরে।
নহি আমি বিধির বৃহৎ পরিহাস,
অসীম ঐশ্বর্য দিয়ে রচিত মহৎ সর্বনাশ।
আরও দেখুনঃ