বর্ষশেষ borsho sesh [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বর্ষশেষ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাব্যগ্রন্থের নামঃ পরিশেষ

কবিতার শিরনামঃ বর্ষশেষ

 

বর্ষশেষ borsho sesh [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

বর্ষশেষ borsho sesh [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যাত্রা হয়ে আসে সারা, – আয়ুর পশ্চিমপথশেষে

                 ঘনায় মৃত্যুর ছায়া এসে।

      অস্তসূর্য আপনার দাক্ষিণ্যের শেষ বন্ধ টুটি

                ছড়ায় ঐশ্বর্য তার ভরি দুই মুঠি।

বর্ণসমারোহে দীপ্ত মরণের দিগন্তের সীমা,

          জীবনের হেরিনু মহিমা।

এই শেষ কথা নিয়ে নিশ্বাস আমার যাবে থামি–

          কত ভালোবেসেছিনু আমি।

অনন্ত রহস্য তারি উচ্ছলি আপন চারি ধার

          জীবন মৃত্যুরে দিল করি একাকার;

বেদনার পাত্র মোর বারম্বার দিবসে নিশীথে

          ভরি দিল অপূর্ব অমৃতে।

দুঃখের দুর্গম পথে তীর্থযাত্রা করেছি একাকী,

          হানিয়াছে দারুণ বৈশাখী।

 

বর্ষশেষ borsho sesh [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Rabindranath Tagore

কত দিন সঙ্গীহীন, কত রাত্রি দীপালোকহারা,

          তারি মাঝে অন্তরেতে পেয়েছি ইশারা।

নিন্দার কণ্টকমাল্যে বক্ষ বিঁধিয়াছে বারে বারে,

          বরমাল্য জানিয়াছি তারে।

আলোকিত ভুবনের মুখপানে চেয়ে নির্নিমেষ

          বিস্ময়ের পাই নাই শেষ।

যে লক্ষ্মী আছেন নিত্য মাধুরীর পদ্ম-উপবনে,

          পেয়েছি তাঁহার স্পর্শ সর্ব অঙ্গে-মনে।

যে-নিশ্বাস তরঙ্গিত নিখিলের অশ্রুতে হাসিতে,

          তারে আমি ধরেছি বাঁশিতে।

যাঁহারা মানুষরূপে দৈববাণী অনির্বচনীয়

           তাঁহাদের জেনেছি আত্মীয়।

কতবার পরাভব, কতবার কত লজ্জা ভয়,

          তবু কণ্ঠে ধ্বনিয়াছে অসীমের জয়।

অসম্পূর্ণ সাধনায় ক্ষণে ক্ষণে ক্রন্দিত আত্মার

          খুলে গেছে অবরুদ্ধ দ্বার।

লভিয়াছি জীবলোকে মানবজন্মের অধিকার,

          ধন্য এই সৌভাগ্য আমার।

যেথা যে অমৃতধারা উৎসারিল যুগে যুগান্তরে

          জ্ঞানে কর্মে ভাবে, জানি সে আমারি তরে।

 

বর্ষশেষ borsho sesh [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Rabindranath Tagore

 

পূর্ণের যে কোনো ছবি মোর প্রাণে উঠেছে উজ্জ্বলি

          জানি তাহা সকলের বলি।

ধূলির আসনে বসি ভূমারে দেখেছি ধ্যানচোখে

          আলোকের অতীত আলোকে।

অণু হতে অণীয়ান মহৎ হইতে মহীয়ান,

          ইন্দ্রিয়ের পারে তার পেয়েছি সন্ধান।

ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়াছি দেহের ভেদিয়া যবনিকা

          অনির্বাণ দীপ্তিময়ী শিখা।

যেখানেই যে-তপস্বী করেছে দুষ্কর যজ্ঞযাগ,

          আমি তার লভিয়াছি ভাগ।

মোহবন্ধমুক্ত যিনি আপনারে করেছেন জয়,

          তাঁর মাঝে পেয়েছি আমার পরিচয়।

যেখানে নিঃশঙ্ক বীর মৃত্যুরে লঙ্ঘিল অনায়াসে,

          স্থান মোর সেই ইতিহাসে।

শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ঠ যিনি, যতবার ভুলি কেন নাম,

          তবু তাঁরে করেছি প্রণাম।

অন্তরে লেগেছে মোর স্তব্ধ আকাশের  আশীর্বাদ;

          উষালোকে আনন্দের পেয়েছি প্রসাদ।

এ আশ্চর্য বিশ্বলোকে জীবনের বিচিত্র গৌরবে

          মৃত্যু মোর পরিপূর্ণ হবে।

আজি এই বৎসরের বিদায়ের শেষ আয়োজন–

           মৃত্যু, তুমি ঘুচাও গুণ্ঠন।

কত কী গিয়েছে ঝরে– জানি জানি, কত স্নেহ প্রীতি

          নিবায়ে গিয়েছে দীপ, রাখে নাই স্মৃতি।

মৃত্যু, তব হাত পূর্ণ জীবনের মৃত্যুহীন ক্ষণে,

          ওগো শেষ, অশেষের ধনে।

আরও দেখুনঃ

Amar Rabindranath Logo

শেষ সপ্তক কাব্যগ্রন্থ , ১৯৩৫ | কবিতা সূচি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শ্যামলী কাব্যগ্রন্থ , ১৯৩৬ | কবিতা সূচি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ছড়ার ছবি কাব্যগ্রন্থ , ১৯৩৭ | কবিতা সূচি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আকাশ প্রদীপ কাব্যগ্রন্থ , ১৯৩৯ | কবিতা সূচি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সানাই কাব্যগ্রন্থ , ১৯৪০, | কবিতা সূচি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বর্ষশেষ borsho sesh [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মন্তব্য করুন