ভগ্নহৃদয়- নবম সর্গ bhagno hriday navom sorgo কবিতা
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : ভগ্নহৃদয়
কবিতার শিরোনামঃ ভগ্নহৃদয় নবম সর্গ

ভগ্নহৃদয় নবম সর্গ bhagno hriday navom sorgo কবিতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নলিনী ও সখীগণ
নলিনী।
[গাহিতে গাহিতে]
কি হল আমার? বুঝি বা সজনি
হৃদয় হারিয়েছি!
প্রভাতকিরণে সকাল বেলাতে
মন লয়ে সখি গেছিনু খেলাতে,
মন কুড়াইতে, মন ছড়াইতে,
মনের মাঝারে খেলি বেড়াইতে,
মনফুল দলি চলি বেড়াইতে–
সহসা, সজনি, চেতনা পাইয়া
সহসা, সজনি, দেখিনু চাহিয়া
রাশি রাশি ভাঙ্গা হৃদয়মাঝারে
হৃদয় হারিয়েছি!

পথের মাঝেতে খেলাতে খেলাতে
হৃদয় হারিয়েছি!
যদি কেহ, সখি, দলিয়া যায়!
তার ‘পর দিয়া চলিয়া যায়!
শুকায়ে পড়িবে, ছিঁড়িয়া পড়িবে–
দলগুলি তার ঝরিয়া পড়িবে,
যদি কেহ, সখি, দলিয়া যায়!
আমার কুসুমকোমল হৃদয়
কখনো সহে নি রবির কর,
আমার মনের কামিনী-পাপড়ি
সহে নি ভ্রমরচরণ-ভর!
চিরদিন সখি বাতাসে খেলিতে,
জোছনা-আলোকে নয়ন মেলিতে,
হাসিপরিমলে অধর ভরিয়া
লোহিত রেণুর সিঁদুর পরিয়া
ভ্রমরে ডাকিতে হাসিতে হাসিতে–
কাছে এলে তারে দিত না বসিতে–
সহসা আজ সে হৃদয় আমার
কোথায় হারিয়েছি!
এখনো যদি গো খুঁজিয়া পাই
এখনো তাহারে কুড়ায়ে আনি–
এখনো তাহারে দলে নাই কেহ,
আমার সাধের কুসুমখানি।
এখনো, সজনি, একটি পাপড়ি
ঝরে নি তাহার জানি লো জানি।
শুধু হারায়েছে, খুঁজিয়া পাইলে
এখনি তাহারে কুড়ায়ে আনি।
ত্বরা কর্ তবে, ত্বরা কর্ তোরা,
হৃদয় খুঁজিতে যাই–
শুকাবার আগে ছিঁড়িবার আগে
হৃদয় আমার চাই!

[সখীদের প্রতি]
বিপাশাতীরের পথে, সখি, আয়
আয়, ত্বরা করে আয়!
জানিস্ কি, সখি, নদীতীরে কবি
কখন বেড়াতে যায়?
জানিস্ ত, সখি, পথের ধারেতে
একটি অশোক আছে,
বনলতা কত ফুলে ফুলে ভরা
উঠিয়াছে সেই গাছে–
সেই খানে, সখি, সেই গাছতলে
বসিয়া থাকিতে হবে।
সেই পথ দিয়া যাইবে ত কবি?
আয় ত্বরা করে তবে।
বল্ দিখি তোরা হল কি আমার!
যখন কবির সুমুখে থাকি
একটিও কথা পারি নে, বলিতে,
পারি নে তুলিতে আনত আঁখি!
কতবার, সখি, করিয়াছি মনে
পরিহাস করি কহিব কথা–
নিদারুণ হাসি হাসিয়া হাসিয়া
হৃদয়ে হৃদয়ে দিব গো ব্যথা,
কৃষ্ণহীরা-সম কৃষ্ণ আঁখি-তারা
আঁধার-আগার হতে আলো-ধারা
হানিবে হেথায়, হানিবে হোথায়
আকুলিয়া দশ দিশ–
মুরছিয়া তার পড়িবেক মন,
মুদিয়া আসিবে অবশ নয়ন,
যতই ঢালিব এ অধর হতে
মিষ্ট সুধাময় বিষ!

কিন্তু কি করে সে চেয়ে থাকে, সখি,
না জানি নয়নে কি আছে জ্যোতি!
এমন সে গান গায় ধীরে ধীরে,
কথা কয়, সখি, মৃদুল অতি–
মুখেতে আমার কথা নাহি ফুটে,
চাহিতে পারি নে আঁখির পানে,
হাসির লহরী খেলে না অধরে,
নয়নে তড়িৎ নাহিক হানে!
আয় ত্বরা করে– বেলা হয়ে এল,
অস্তাচলে যায় রবি,
পথের ধারেতে বসি রব’ মোরা
সেই পথে যাবে কবি!
![ভগ্নহৃদয় নবম সর্গ bhagno hriday navom sorgo কবিতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 6 বিচারক bicharak [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর](https://amarrabindranath.com/wp-content/uploads/2021/09/cropped-Amar-Rabindranath-Logo-300x300.jpeg)
আরও পড়ুনঃ