ভগ্নহৃদয় ১৮৮১, (গীতি-কাব্য) সালে প্রকাশিত হয়। এটি ৩৪-টি সর্গে বিভক্ত। লন্ডনে ভ্রমণ কালে তিনি এটি রচনা করতে শুরু করেন।কলিকাতা, বাল্মীকিযন্ত্রে, শ্রীকালীকিঙ্কর চক্রবর্ত্তী দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত। শকাব্দ। ১৮০৩।
ভগ্নহৃদয় ভূমিকা:
এই কাব্যটিকে কেহ যেন নাটক মনে না করেন। নাটক ফুলের গাছ। তাহাতে ফুল ফুটে বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে মূল, কাণ্ড, শাখা, পত্র, এমন কি কাঁটাটি পর্য্যন্ত থাকা চাই। বর্ত্তমান কাব্যটি ফুলের মালা, ইহাতে কেবল ফুলগুলি মাত্র সংগ্রহ করা হইয়াছে। বলা বাহুল্য, যে, দৃষ্টান্ত স্বরূপেই ফুলের উল্লেখ করা হইল।
কাব্যের পাত্রগণ।
কবি।
অনিল।
মুরলা : অনিলের ভগ্নী ও কবির বাল্য-সহচরী।
ললিতা : অনিলের প্রণয়িনী।
নলিনী : এক চপল-স্বভাবা কুমারী।
চপলা : মুরলার সখী।
লীলা, সুরুচি, মাধবী প্রভৃতি : নলিনীর সখীগণ।
সুরেশ, বিজয়, বিনোদ প্রভৃতি – নলিনীর বিবাহ বা প্রণয়াকাঙ্ক্ষী।
উপহার।
শ্রীমতী হে ————————————,
১
হৃদয়ের বনে বনে সূর্য্যমুখী শত শত
ওই মুখ পানে চেয়ে ফুটিয়া উঠেছে যত।
বেঁচে থাকে বেঁচে থাক, শুকায় শুকায়ে যাক্,
ওই মুখ পানে তারা চাহিয়া থাকিতে চায়,
বেলা অবসান হবে, মুদিয়া আসিবে যবে
ওই মুখ চেয়ে যেন নীরবে ঝরিয়া যায়!
২
জীবন-সমুদ্রে তব জীবন তটিনী মোর
মিশায়েছি একেবারে আনন্দে হইয়ে ভোর,
সন্ধ্যার বাতাস লাগি ঊর্ম্মি যত উঠে জাগি,
অথবা তরঙ্গ উঠে ঝটিকায় আকুলিয়া,
জানে বা না জানে কেউ, জীবনের প্রতি ঢেউ
মিশিবে—বিরাম পাবে—তোমার চরণে গিয়া।
৩
হয়ত জান না, দেবি, অদৃশ্য বাঁধন দিয়া
নিয়মিত পথে এক ফিরাইছ মোর হিয়া।
গেছি দুরে, গেছি কাছে, সেই আকর্ষণ আছে,
পথভ্রষ্ট হইনাক’ তাহারি অটল বলে,
নহিলে হৃদয় মম ছিন্ন ধূমকেতু সম
দিশাহারা হইত সে অনন্ত আকাশ তলে।
৪
আজ সাগরের তীরে দাঁড়ায়ে তোমার কাছে;
পর পারে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার দেশ আছে;
দিবস ফুরাৰে যবে সে দেশে যাইতে হবে,
এ পারে ফেলিয়া যাব আমার তপন শশি,
ফুরাইবে গীত গান, অবসাদে ম্ৰিয়মান,
সুখ শান্তি অবসান কাঁদিব আঁধারে বসি!
৫
স্নেহের অরুণালোকে খুলিয়া হৃদয় প্রাণ,
এ পারে দাঁড়ায়ে, দেবি, গাহিনু যে শেষ গান,
তোমারি মনের ছায় সে গান আশ্রয় চায়,
একটি নয়ন জল তাহারে করিও দান।
আজিকে বিদায় তবে, আবার কি দেখা হবে,
পাইয়া স্নেহের আলো হৃদয় গাহিবে গান?
আরও পড়ুন: