যাবার মুখে কবিতা | jabar mukhe kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যাবার মুখে কবিতাটি [ jabar mukhe kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থের অংশ।

যাবার মুখে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাব্যগ্রন্থের নামঃ সেঁজুতি

কবিতার নামঃ যাবার মুখে

 

যাবার মুখে কবিতা | jabar mukhe kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

যাবার মুখে কবিতা | jabar mukhe kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যাক এ জীবন,

যাক নিয়ে যাহা টুটে যায়, যাহা

          ছুটে যায়, যাহা

ধুলি হয়ে লোটে ধুলি’-পরে, চোরা

          মৃত্যুই যার অন্তরে, যাহা

                   রেখে যায় শুধু ফাঁক।

যাক এ জীবন পুঞ্জিত তার জঞ্জাল নিয়ে যাক।

          টুকরো যা থাকে ভাঙা পেয়ালার,

          ফুটো সেতারের সুরহারা তার,

                   শিখা-নিবে-যাওয়া বাতি,

          স্বপ্নশেষের ক্লান্তি-বোঝাই রাতি-

                   নিয়ে যাক যত দিনে-দিনে জমা-করা

                             প্রবঞ্চনায়-ভরা

                   নিষ্ফলতার সযত্ন সঞ্চয়।

কুড়ায়ে ঝাঁটায়ে মুছে নিয়ে যাক, নিয়ে যাক শেষ করি

          ভাঁটার স্রোতের শেষ-খেয়া-দেওয়া তরী।

 

যাবার মুখে কবিতা | jabar mukhe kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

নিঃশেষ যবে হয় যত কিছু ফাঁকি

          তবুও যা রয় বাকি-

                   জগতের সেই

          সকল-কিছুর অবশেষেতেই

          কাটায়েছি কাল যত অকাজের বেলায়।

মন-ভোলাবার অকারণ গানে কাজ ভোলাবার খেলায়।

          সেখানে যাহারা এসেছিল মোর পাশে

          তারা কেহ নয়, তারা কিছু নয় মানুষের ইতিহাসে।

শুধু অসীমের ইশারা তাহারা এনেছে আঁখির কোণে,

          অমরাবতীর নৃত্যনূপুর বাজিয়ে গিয়েছে মনে।

দখিনহাওয়ার পথ দিয়ে তারা উঁকি মেরে গেছে দ্বারে,

কোনো কথা দিয়ে তাদের কথা যে বুঝাতে পারি নি কারে।

          রাজা মহারাজা মিলায় শূন্যে ধুলার নিশান তুলে,

          তারা দেখা দিয়ে চলে যায় যবে ফুটে ওঠে ফুলে ফুলে।

                   থাকে নাই থাকে কিছুতেই নেই ভয়,

          যাওয়ায় আসায় দিয়ে যায় ওরা নিত্যের পরিচয়।

                   অজানা পথের নামহারা ওরা লজ্জা দিয়েছে মোরে

          হাটে বাটে যবে ফিরেছি কেবল নামের বেসাতি করে।

          আমার দুয়ারে আঙিনায় ধারে ওই চামেলির লতা

                   কোনো দুর্দিনে করে নাই কৃপণতা।

          ওই-যে শিমূল, ওই-যে সজিনা, আমারে বেঁধেছে ঋণে-

                   কত-যে আমার পাগলামি-পাওয়া দিনে

কেটে গেছে বেলা শুধু চেয়ে-থাকা মধুর মৈতালিতে,

          নীল আকাশের তলায় ওদের সবুজ বৈতালিতে।

          সকালবেলার প্রথম আলোয় বিকালবেলার ছায়ায়

          দেহপ্রাণমন ভরেছে সে কোন্‌ অনাদি কালের মায়ায়।

                   পেয়েছি ওদের হাতে

          দুরজননের আদিপরিচয় এই ধরণীর সাথে।

 

যাবার মুখে jabar mukhe [ কবিতা ] -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

অসীম আকাশে যে প্রাণ-কাঁপন অসীম কালের বুকে

          নাচে অবিরাম, তাহারি বারতা শুনেছি ওদের মুখে।

                   যে মন্ত্রখানি পেয়েছি ওদের সুরে

          তাহার অর্থ মৃত্যুর সীমা ছাড়ায়ে গিয়েছে দূরে।

                   সেই সত্যেরই ছবি

          তিমিরপ্রান্তে চিত্তে আমার এনেছে প্রভাতরবি।

          সে রবিরে চেয়ে কবির সে বাণী আসে অন্তরে নামি-

“যে আমি রয়েছে তোমার আমায় সে আমি আমারি আমি’।

          সে আমি সকল কালে,

          সে আমি সকল খানে,

প্রেমের পরশে সে অসীম আমি বেজে ওঠে মোর গানে।

          যায় যদি তবে যাক

          এল যদি শেষ ডাক-

অসীম জীবনে এ ক্ষীণ জীবন শেষ রেখা এঁকে যাক,

                   মৃত্যুতে ঠেকে যাক।

যাক নিয়ে যাহা টুটে যায়, যাহা

                   ছুটে যায়, যাহা

          ধুলি হয়ে লুটে ধুলি-‘পরে, চোরা

                   মৃত্যুই যার অন্তরে, যাহা

                   রেখে যায় শুধু ফাঁক-

                             যাক নিয়ে তাহা, যাক এ জীবন, যাক।

আরও দেখুনঃ

Amar Rabindranath Logo

মন্তব্য করুন