Site icon Amar Rabindranath [ আমার রবীন্দ্রনাথ ] GOLN

অতীতের ছায়া কবিতা | otiter chhaya kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অতীতের ছায়া কবিতাটি [ otiter chhaya kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বীথিকা কাব্যগ্রন্থের অংশ।

অতীতের ছায়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

কাব্যগ্রন্থের নামঃ বীথিকা

কবিতার নামঃ অতীতের ছায়া

Rabindranath Tagore

অতীতের ছায়া কবিতা | otiter chhaya kobita | বীথিকা কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

মহা-অতীতের সাথে আজ আমি করেছি মিতালি–

     দিবালোক-অবসানে তারালোক জ্বালি

          ধ্যানে সেথা বসেছে সে

               রূপহীন দেশে;

     যেথা অস্তসূর্য হতে নিয়ে রক্তরাগ

          গুহাচিত্রে করিছে সজাগ

               তার তুলি

     ম্রিয়মাণ জীবনের লুপ্ত রেখাগুলি;

     নিমীলিত বসন্তের ক্ষান্তগন্ধে যেখানে সে

গাঁথিয়া অদৃশ্যমালা পরিছে নিবিড় কালোকেশে;

          যেখানে তাহার কণ্ঠহারে

               দুলায়েছে সারে সারে

     প্রাচীন শতাব্দীগুলি শন্ত-চিত্তদহন বেদনা

               মাণিক্যের কণা।

        সেথা বসে আছি কাজ ভুলে

          অস্তাচলমূলে

               ছায়াবীথিকায়।

 

Rabindranath Tagore

        রূপময় বিশ্বধারা অবলুপ্তপ্রায়

          গোধূলিধূসর আবরণে,

অতীতের শূন্য তার সৃষ্টি মেলিতেছে মোর মনে।

       এ শূন্য তো মরুমাত্র নয়,

               এ যে চিত্তময়;

          বর্তমান যেতে যেতে এই শূন্যে যায় ভ’রে রেখে

                   আপন অন্তর থেকে

                       অসংখ্য স্বপন;

               অতীত এ শূন্য দিয়ে করেছি বপন

                   বস্তুহীন সৃষ্টি যত,

নিত্যকাল-মাঝে তারি ফলশস্য ফলিছে নিয়ত।

আলোড়িত এই শূন্য যুগে যুগে উঠিয়াছে জ্বলি,

          ভরিয়াছে জ্যোতির অঞ্জলি।

     বসে আছি নির্নিমেষ চোখে

          অতীতের সেই ধ্যানালোকে–

নি:শব্দ তিমিরতটে জীবনের বিস্মৃত রাতির।

হে অতীত,

       শান্ত তুমি নির্বাণ-বাতির

          অন্ধকারে,

     সুখদুখনিষ্কৃতির পারে।

   শিল্পী তুমি, আঁধারের ভূমিকায়

নিভৃতে রচিছ সৃষ্টি নিরাসক্ত নির্মম কলায়,

স্মরণে ও বিস্মরণে বিগলিত বর্ণ দিয়া লিখা

          বর্ণিতেছ আখ্যায়িকা;

পুরাতন ছায়াপথে নূতন তারার মতো

          উজ্জ্বলি উঠিছে কত,

     কত তার নিভাইছ একেবারে

          যুগান্তের অশান্ত ফুৎকারে।

     আজ আমি তোমার দোসর,

আশ্রয় নিতেছি সেথা যেথা আছে মহা-অগোচর।

 

Rabindranath Tagore

   তব অধিকার আজি দিনে দিনে ব্যাপ্ত হয়ে আসে

          আমার আয়ুর ইতিহাসে।

     সেথা তব সৃষ্টির মন্দিরদ্বারে

আমার রচনাশালা স্থাপন করেছি একধারে

          তোমারি বিহারবনে ছায়াবীথিকায়।

                   ঘুচিল কর্মের দায়,

ক্লান্ত হল লোকমুখে খ্যাতির আগ্রহ;

     দুঃখ যত সয়েছি দুঃসহ

           তাপ তার করি অপগত

               মূর্তি তারে দিব নানামতো

                   আপনার মনে মনে।

কলকোলাহলশান্ত জনশূন্য তোমার প্রাঙ্গণে,

     যেখানে মিটেছে দ্বন্দ্ব মন্দ ও ভালোয়,

                   তারার আলোয়

সেখানে তোমার পাশে আমার আসন পাতা–

     কর্মহীন আমি সেথা বন্ধহীন সৃষ্টির বিধাতা।

আরও দেখুনঃ 

Exit mobile version