Site icon Amar Rabindranath [ আমার রবীন্দ্রনাথ ] GOLN

অনাদৃত কবিতা । onadrita kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অনাদৃত কবিতাটি [ onadrita kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের অংশ। এটি ১৮৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “মানসী-সোনার তরী পর্ব”-এর অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

কাব্যগ্রন্থের নামঃ সোনার তরী

কবিতার নামঃ অনাদৃত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

অনাদৃত কবিতা । onadrita kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অনাদৃত

তখন তরুণ রবি প্রভাতকালে

আনিছে উষার পূজা সোনার থালে।

     সীমাহীন নীল জল

     করিতেছে থলথল্‌,

     রাঙা রেখা জ্বলজ্বল্‌

          কিরণমালে।

তখন উঠিছে রবি গগনভালে।

গাঁথিতেছিলাম জাল বসিয়া তীরে।

বারেক অতল-পানে চাহিনু ধীরে–

     শুনিনু কাহার বাণী

     পরান লইল টানি,

     যতনে সে জালখানি

          তুলিয়া শিরে

ঘুরায়ে ফেলিয়া দিনু সুদূর নীরে।

নাহি জানি কত কী যে উঠিল জালে।

কোনোটা হাসির মতো কিরণ ঢালে,

     কোনোটা বা টলটল্‌

     কঠিন নয়নজল,

     কোনোটা শরম-ছল

          বধূর গালে–

সেদিন সাগরতীরে প্রভাতকালে।

বেলা বেড়ে ওঠে, রবি ছাড়ি পুরবে

গগনের মাঝখানে ওঠে গরবে।

     ক্ষুধাতৃষ্ণা সব ভুলি

     জাল ফেলে টেনে তুলি–

     উঠিল গোধূলি-ধূলি

          ধূসর নভে,

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

গাভীগণ গৃহে ধায় হরষ-রবে।

লয়ে দিবসের ভার ফিরিনু ঘরে,

তখন উঠিছে চাঁদ আকাশ-‘পরে।

     গ্রামপথে নাহি লোক,

     পড়ে আছে ছায়ালোক,

     মুদে আসে দুটি চোখ

          স্বপনভরে ;

ডাকিছে বিরহী পাখি কাতর স্বরে।

সে তখন গৃহকাজ সমাধা করি

কাননে বসিয়া ছিল মালাটি পরি।

     কুসুম একটি দুটি

     তরু হতে পড়ে টুটি,

     সে করিছে কুটিকুটি

          নখেতে ধরি;

আলসে আপন মনে সময় হরি।

বারেক আগিয়ে যাই, বারেক পিছু।

কাছে গিয়ে দাঁড়ালেম, নয়ন নিচু।

     যা ছিল চরণে রেখে

     ভূমিতল দিনু ঢেকে,

     সে কহিল দেখে দেখে,

            “চিনি নে কিছু।’–

শুনি রহিলাম শির করিয়া নিচু।

ভাবিলাম, সারাদিন সারাটি বেলা

বসে বসে করিয়াছি কী ছেলেখেলা!

     না জানি কী মোহে ভুলে

     গেনু অকূলের কূলে,

     ঝাঁপ দিনু কুতূহলে–

            আনিনু মেলা

অজানা সাগর হতে অজানা ঢেলা।

যুঝি নাই, খুঁজি নাই হাটের মাঝে–

এমন হেলার ধন দেওয়া কি সাজে!

     কোনো দুখ নাহি যার

     কোনো তৃষা বাসনার

     এ-সব লাগিবে তার

            কিসের কাজে!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-[ Rabindranath Tagore ]

কুড়ায়ে লইনু পুন মনের লাজে।

সারাটি রজনী বসি দুয়ারদেশে

একে একে ফেলে দিনু পথের শেষে।

     সুখহীন ধনহীন

     চলে গেনু উদাসীন–

     প্রভাতে পরের দিন

            পথিকে এসে

সব তুলে নিয়ে গেল আপন দেশে।

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version