তারকার আত্মহত্যা taarakaar aatmahatyaa [ কবিতা ]
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : সন্ধ্যা সঙ্গীত
কবিতার শিরোনামঃ তারকার আত্মহত্যা
তারকার আত্মহত্যা taarakaar aatmahatyaa [ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জ্যোতির্ময় তীর হতে আঁধার সাগরে
ঝাঁপায়ে পড়িল এক তারা,
একেবারে উন্মাদের পারা।
চৌদিকে অসংখ্য তারা রহিল চাহিয়া
অবাক হইয়া–
এই-যে জ্যোতির বিন্দু আছিল তাদের মাঝে
মুহুর্তে সে গেল মিশাইয়া।
যে সমূদ্রতলে
মনোদুঃখে আত্মঘাতী
চির-নির্বাপিত-ভাতি
শত মৃত তারকার
মৃতদেহ রয়েছে শয়ান
সেথায় সে করেছে পয়ান।
কেন গো, কী হয়েছিল তার।
একরার শুধালে না কেহ–
কী লাগি সে তেয়াগিল দেহ।
যদি কেহ শুধাইতো
আমি জানি কী যে সে কহিত।
যতদিন বেঁচে ছিল
আমি জানি কী তারে দহিত।
সে কেবল হাসির যন্ত্রণা,
আর কিছু না!
জ্বলন্ত অঙ্গারখণ্ড ঢাকিতে আঁধার হৃদি
অনিবার হাসিতেই রহে,
যত হাসে ততই সে দহে।
তেমনি, তেমনি তারে হাসির অনল
দারুণ উজ্জল–
দহিত, দহিত তারে, দহিত, কেবল।
জ্যোতির্ময় তারাপূর্ণ বিজন তেয়াগি
তাই আজ ছুটেছে সে নিতান্ত মনের ক্লেশে
আঁধারের তারাহীন বিজনের লাগি।
কেন গো তোমরা যত তারা
উপহাস করি তার হাসিছ অমন ধারা।
তোমাদের হয় নি তো ক্ষতি,
যেমন আছিল আগে তেমনি রয়েছে জ্যোতি।
সে কি কভু ভেবেছিল মনে-
(এত গর্ব আছিল কি তার)।
আপনারে নিবাইয়া তোমাদের করিবে আঁধার।
গেল, গেল, ডুবে গেল, তারা এক ডুবে গেল,
আঁধারসাগরে–
গভীর নিশীথে
অতল আকাশে।
হৃদয়, হৃদয় মোর, সাধ কি রে যায় তোর
ঘুমাইতে ওই মৃত তারাটির পাশে
ওই আঁধারসাগরে
এই গভীর নিশীথে
ওই অতল আকারুন
আরও পড়ুনঃ
ভবিষ্যতের রঙ্গভূমি bhobishyoter rongobhumi [ কবিতা ] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর