দুর্ব্বোধ কবিতা । durbodh kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দুর্ব্বোধ কবিতাটি [ priya kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের অংশ। এটি ১৮৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “মানসী-সোনার তরী পর্ব”-এর অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

কাব্যগ্রন্থের নামঃ সোনার তরী

কবিতার নামঃ দুর্ব্বোধ

দুর্ব্বোধ কবিতা । durbodh kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

দুর্ব্বোধ কবিতা । durbodh kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দুর্ব্বোধ।

তুমি মোরে পার না বুঝিতে?
প্রশান্ত বিষাদ তরে
দুটি আঁখি প্রশ্ন করে’
অর্থ মোর চাহিছে খুঁজিতে,
চন্দ্রমা যেমন ভাবে স্থির নত মুখে
চেয়ে দেখে সমুদ্রের বুকে।

কিছু আমি করিনি গোপন।
যাহা আছে, সব আছে
তোমার আঁখির কাছে
প্রসারিত অবারিত মন।
দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারণা,
তাই মোরে বুঝিতে পার না?

এ যদি হইত শুধু মণি,
শত খণ্ড করি তারে
সযত্নে বিবিধাকারে,
একটি একটি করি’ গণি’
একখানি সূত্রে গাঁখি একখানি হায়
পরাতেম গলায় তোমার!

 

এ যদি হইত শুধু ফুল,
সুগোল সুন্দর ছোটো,
ঊষালোকে ফোটো-ফোটো,
বসন্তের পবনে দোদুল,
বৃন্ত হতে সযতনে আনিতাম তুলে,
পরায়ে দিতে কালো চুলে!

দুর্ব্বোধ কবিতা । durbodh kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]
এ যে সখি সম হৃদয়!
কোথা জল, কোথা কূল,
দিক হয়ে যায় ভুল,
অন্তহীন রহস্য-নিলয়।
এ রাজ্যের আদি অন্ত নাহি জান রাণী,
এ তবু তোমার রাজধানী!কি তোমারে চাহি বুঝাইতে?
গভীর হৃদয় মাঝে
নাহি জানি কি যে বাজে
নিশিদিন নীরব সঙ্গীতে!
শব্দহীন স্তব্ধতায় ব্যাপিয়া গগন
রজনীর ধ্বনির মতন।

 

এ যদি হইত শুধু সুখ,
কেবল একটি হাসি
অধরের প্রান্তে আসি
আনন্দ করিত জাগরূক।
মুহূর্ত্তে বুঝিয়া নিতে হৃদয়-বারতা
বলিতে হত না কোন কথা!

দুর্ব্বোধ কবিতা । durbodh kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

এ যদি হইত শুধু দুখ,
দুটি বিন্দু অশ্রুজল
দুই চক্ষে ছল ছল,
বিষন্ন অধর ম্লান মুখ,
প্রত্যক্ষ দেখিতে পেতে অন্তরের ব্যথা,
নীরবে প্রকাশ হত কথা!এ যে সখি হৃদয়ের প্রেম!
সুখ দুঃখ বেদনার
আদি অন্ত নাহি যার
চির দৈন্য চির পূর্ণ হেম!
নব নব ব্যাকুলতা জাগে দিবা রাতে
তাই আমি না পারি বুঝাতে!

 

মন্তব্য করুন