দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দেউল কবিতাটি [ deul kobita ] কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের অংশ। এটি ১৮৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “মানসী-সোনার তরী পর্ব”-এর অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

কাব্যগ্রন্থের নামঃ সোনার তরী

কবিতার নামঃ দেউল

দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দেউল

রচিয়াছিনু দেউল একখানি

অনেক দিনে অনেক দুখ মানি।

      রাখি নি তার জানালা দ্বার,

      সকল দিক অন্ধকার,

      ভূধর হতে পাষাণভার

       যতনে বহি আনি॥

রচিয়াছিনু দেউল একখানি।

দেবতাটিরে বসায়ে মাঝখানে

ছিলাম চেয়ে তাহারি মুখপানে।

বাহিরে ফেলি এ ত্রিভুবন

    ভুলিয়া গিয়া বিশ্বজন

    ধেয়ান তারি অনুক্ষণ

    করেছি একপ্রাণে,॥

দেবতাটিরে বসায়ে মাঝখানে।

দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

যাপন করি অন্তহীন রাতি

জ্বালায়ে শত গন্ধময় বাতি।

    কনকমণি-পাত্রপুটে

    সুরভি ধূপধূম্র উঠে,

    গুরু অগুরু-গন্ধ ছুটে,

   পরান উঠে মাতি॥

যাপন করি অন্তহীন রাতি।

নিদ্রাহীন বসিয়া এক চিতে

চিত্র কত এঁকেছি চারি ভিতে।

    স্বপ্নসম চমৎকার,

    কোথাও নাহি উপমা তার–

    কত বরন, কত আকার

   কে পারে বরনিতে    ॥

চিত্র যত এঁকেছি চারি ভিতে।

স্তম্ভগুলি জড়ায়ে শত পাকে

নাগবালিকা ফণা তুলিয়া থাকে।

    উপরে ঘিরি চারিটি ধার

    দৈত্যগুলি বিকটাকার,

    পাষাণময় ছাদের ভার

              মাথায় ধরি রাখে॥

নাগবালিকা ফণা তুলিয়া থাকে।

সৃষ্টিছাড়া সৃজন কত মতো।

পক্ষীরাজ উড়িছে শত শত।

দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

    ফুলের মতো লতার মাঝে

    নারীর মুখ বিকশি রাজে

    প্রণয়ভরা বিনয়ে লাজে

        নয়ন করি নত।

সৃষ্টিছাড়া সৃজন কত মতো।

ধ্বনিত এই ধারার মাঝখানে

শুধু এ গৃহ শব্দ নাহি জানে।

    ব্যাঘ্রাজিন-আসন পাতি

    বিবিধরূপ ছন্দ গাঁথি

    মন্ত্র পড়ি দিবস রাতি

        গুঞ্জরিত তানে,

শব্দহীন গৃহের মাঝখানে।

এমন করে গিয়েছে কত দিন,

জানি নে কিছু, আছি আপন-লীন।

    চিত্ত মোর নিমেষহত

    ঊর্ধ্বমুখী শিখার মতো,

    শরীরখানি মূর্ছাহত

         ভাবের তাপে ক্ষীণ।

এমন করে গিয়েছে কত দিন।

একদা এক বিষম ঘোর স্বরে

বজ্র আসি পড়িল মোর ঘরে।

    বেদনা এক তীক্ষ্ণতম

    পশিল গিয়ে হৃদয়ে মম,

    অগ্নিময় সর্পসম

        কাটিল অন্তরে।

বজ্র আসি পড়িল মোর ঘরে।

পাষাণরাশি সহসা গেল টুটি,

গৃহের মাঝে দিবস উঠে ফুটি।

দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

    নীরব ধ্যান করিয়া চুর

    কঠিন বাঁধ করিয়া দূর

    সংসারের অশেষ সুর

          ভিতরে এল ছুটি।

পাষাণরাশি সহসা গেল টুটি।

দেবতা-পানে চাহিনু একবার,

আলোক আসি পড়েছে মুখে তাঁর।

    নূতন এক মহিমারাশি

    ললাটে তাঁর উঠেছে ভাসি,

    জাগিছে এক প্রসাদহাসি

        অধর-চারিধার।

দেবতা-পানে চাহিনু একবার।

শরমে দীপ মলিন একেবারে

লুকাতে চাহে চির-অন্ধকারে।

    শিকলে বাঁধা স্বপ্নমতো

    ভিত্তি-আঁকা চিত্র যত

    আলোক দেখি লজ্জাহত

        পালাতে নাহি পারে।

শরমে দীপ মলিন একেবারে।

যে গান আমি নারিনু রচিবারে

সে গান আজি উঠিল চারি ধারে।

    আমার দীপ জ্বালিল রবি,

    প্রকৃতি আসি আঁকিল ছবি,

    গাঁথিল গান শতেক কবি

        কতই ছন্দ-হারে।

কী গান আজি উঠিল চারি ধারে।

দেউলে মোর দুয়ার গেল খুলি–

ভিতরে আর বাহিরে কোলাকুলি,

    দেবের করপরশ লাগি

    দেবতা মোর উঠিল জাগি,

    বন্দী নিশি গেল সে ভাগি

        আঁধার পাখা তুলি।

দেউলে মোর দুয়ার গেল খুলি।

দেউল কবিতা । deul kobita | সোনার তরী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]
আরও পড়ুনঃ

মন্তব্য করুন