পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ (১৯৩২) কাব্যগ্রন্থ | কবিতা সূচি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

“পরিশেষ” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের শেষ পর্বে লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ, যা ১৯৩২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর সাহিত্যজীবনের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন, যেখানে মৃত্যুচেতনা, জীবনের অন্তিম উপলব্ধি, আধ্যাত্মিকতা এবং বিশ্বমানবতার বোধ গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থ মূলত রবীন্দ্রনাথের বার্ধক্যকালীন মানসিক অবস্থা, জীবনের প্রতি তাঁর ত্যাগী ও ধ্যানমগ্ন মনোভাব এবং বিশ্বপ্রকৃতির সাথে আত্মমিলনের অন্বেষা প্রকাশ করে।

প্রকাশনা ও প্রেক্ষাপট

“পরিশেষ” রচনার সময়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও মানসিকভাবে অত্যন্ত প্রখর ছিলেন। বয়সের ভার, অসুস্থতা এবং জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁকে অন্তর্দৃষ্টির নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ১৯৩০-এর দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস এবং মানবসভ্যতার সংকট তাঁকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে, যা কাব্যগ্রন্থটির বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

বিষয়বস্তু ও শৈলী

“পরিশেষ” গ্রন্থের কবিতাগুলোতে দেখা যায়—

  • মৃত্যুচেতনা: মৃত্যুকে ভয় হিসেবে নয়, বরং জীবনের স্বাভাবিক ও অনিবার্য সমাপ্তি হিসেবে গ্রহণ।

  • আত্মসমর্পণ: স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও জীবনের শেষ অধ্যায়ে শান্তি লাভের আকাঙ্ক্ষা।

  • প্রকৃতির সাথে মিলন: জীবন ও মৃত্যু, আলো ও অন্ধকার—সবকিছুর মাঝে সঙ্গতির বোধ।

  • আধ্যাত্মিকতা: মানবজীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব উপলব্ধি করে চিরন্তন সত্যের সন্ধান।

শৈলীতে রবীন্দ্রনাথ এখানে অত্যন্ত সংযত, গভীর ও ধ্যানমগ্ন ভাষা ব্যবহার করেছেন। উপমা ও প্রতীকী চিত্রকল্পের মাধ্যমে তিনি মৃত্যুকে এক নীরব, প্রশান্ত, অথচ মহিমাময় যাত্রা হিসেবে দেখিয়েছেন।

গুরুত্ব

“পরিশেষ” শুধু রবীন্দ্রনাথের অন্তিম উপলব্ধির দলিল নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এখানে তাঁর সৃষ্টিশীলতার পরিণত রূপ, ভাবনার প্রগাঢ়তা এবং বিশ্বদর্শনের সংহতি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

পরিশেষ কাব্যগ্রন্থ কবিতা সূচি

মন্তব্য করুন