পুনশ্চ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ, যা ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি তাঁর সৃষ্টিজীবনের “অন্ত্যপর্ব”-এর অন্তর্গত হলেও এতে কবির সৃজনশীলতা, আবেগপ্রবণতা ও জীবনবোধ সমানভাবে তীক্ষ্ণ ও সমৃদ্ধভাবে ফুটে উঠেছে। গদ্যছন্দে রচিত এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৫৫টি কবিতা সংকলিত হয়েছে। এতে প্রেম, জীবন, মৃত্যু, প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিক অন্বেষা—সবকিছুই নতুন ভাষা ও ছন্দে প্রকাশ পেয়েছে, যা পাঠককে এক ভিন্ন নান্দনিক অভিজ্ঞতা দেয়।
গ্রন্থটির কবিতাগুলোয় রবীন্দ্রনাথ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অতীত স্মৃতি এবং দর্শনশীল মনোভাবকে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। এখানে প্রেম কেবল ব্যক্তিগত আবেগ নয়, বরং তা মানুষের গভীরতর মানবিকতার অনুসন্ধান। প্রকৃতির বর্ণনা, প্রিয়জনের স্মৃতি, সময়ের প্রবাহ এবং অন্তর্লোকের টানাপোড়েন—সবই ‘পুনশ্চ’-তে এক নতুন ব্যঞ্জনা পেয়েছে। বিশেষত, তাঁর গদ্যছন্দের ব্যবহার এই গ্রন্থে চূড়ান্ত স্বচ্ছন্দতা লাভ করেছে, যা পাঠকের কাছে স্বতঃস্ফূর্ত ও মাধুর্যমণ্ডিত মনে হয়।
‘পুনশ্চ’-তে কবি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এক ধরনের নির্লিপ্ত শান্তি খুঁজেছেন, কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর সৃষ্টিশীল মন চিরকালীন প্রেম ও সৌন্দর্যের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেল থেকেছে। এই গ্রন্থের কবিতাগুলো রবীন্দ্রনাথের পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি, নীরব বিষাদ এবং মানবজীবনের চিরন্তনতার প্রতি গভীর বিশ্বাসের দলিল। তাই ‘পুনশ্চ’ বাংলা সাহিত্যে শুধু একটি কাব্যগ্রন্থ নয়, বরং কবির এক আত্মসমীক্ষার নথি, যা আজও পাঠককে গভীরভাবে আলোড়িত করে।
পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থ কবিতা সূচি:
- কোপাই
- নাটক
- নূতন কাল
- খোয়াই
- পত্র
- পুকুর-ধারে
- অপরাধী
- ফাঁক
- বাসা
- দেখা
- সুন্দর
- শেষ দান
- কোমল গান্ধার
- বিচ্ছেদ
- স্মৃতি
- ছেলেটা
- সহযাত্রী
- বিশ্বশোক
- শেষ চিঠি
- বালক
- ছেঁড়া কাগজের ঝুড়ি
- কীটের সংসার
- ক্যামেলিয়া
- শালিখ
- সাধারণ মেয়ে
- একজন লোক
- খেলনার মুক্তি
- পত্রলেখা
- খ্যাতি
- উন্নতি
- ভীরু
- তীর্থযাত্রী
- চিররূপের বাণী
- শুচি
- রঙরেজিনী
- মুক্তি
- প্রেমের সোনা
- স্নানসমাপন
- প্রথম পূজা
- অস্থানে
- ঘরছাড়া
- ছুটির আয়োজন
- মৃত্যু
- মানবপুত্র
- শিশুতীর্থ
- শাপমোচন
- ছুটি
- গানের বাসা
- পয়লা আশ্বিন
- বাঁশি