পূরবী কবিতাটি বিশ্বকবি “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পূরবী কাব্যগ্রন্থের অংশ। পূরবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৯২৫ খ্রীস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “বলাকা পর্ব”-এর একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। এতে সর্বমোট ৭৮-টি কবিতা রয়েছে।
কবিতার শিরনামঃ পূরবী [ পূরবী কাব্যগ্রন্থ ]
পূরবী কবিতা | Purobi Kobita
যারা আমার সাঁঝ-সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিলে আলো
আপন হিয়ার পরশ দিয়ে; এই জীবনের সকল সাদা কালো
যাদের আলো-ছায়ার লীলা; সেই যে আমার আপন মানুষগুলি
নিজের প্রাণের স্রোতের ‘পরে আমার প্রাণের ঝর্না নিল তুলি;
তাদের সাথে একটি ধারায় মিলিয়ে চলে, সেই তো আমার আয়ু,
নাই সে কেবল দিন-গণনার পাঁজির পাতায়, নয় সে নিশাস-বায়ু।
তাদের বাঁচায় আমার বাঁচা আপন সীমা ছাড়ায় বহু দূরে;
নিমেষগুলির ফল পেকে যায় নানা দিনের সুধার রসে পুরে;
অতীত কালের আনন্দরূপ বর্তমানের বৃন্ত-দোলায় দোলে–
গর্ভ হতে মুক্ত শিশু তবুও যেন মায়ের বক্ষে কোলে
বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের বাঁধন দিয়ে। তাই তো যখন শেষে
একে একে আপন জনে সূর্য-আলোর অন্তরালের দেশে
আঁখির নাগাল এড়িয়ে পালায়, তখন রিক্ত শীর্ণ জীবন মম
শুষ্ক রেখায় মিলিয়ে আসে বর্ষাশেষের নির্ঝরিণী-সম
শূন্য বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্ত বারি স্রস্ত অবহেলায়।
তাই যারা আজ রইল পাশে এই জীবনের অপরাহ্নবেলায়
তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলো–
বলে নে, “ভাই, এই যা দেখা, এই যা ছোঁওয়া এই ভালো এই ভালো।
এই ভালো আজ এ সংগমে কান্নাহাসির গঙ্গা-যমুনায়
ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায়।
এই ভালো রে প্রাণের রঙ্গে এই আসঙ্গ সকল অঙ্গে মনে
পুণ্য ধরার ধুলো মাটি ফল হাওয়া জল তৃণ তরুর সনে।
এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জাগা, গান গাওয়া এই ভাষায়–
তারার সাথে নিশীথ রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন-প্রাতের আশায়।’
আরও দেখুনঃ
- আমার প্রিয়ার ছায়া [ Amar Priyar Chhaya ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- কিছু বলব বলে এসেছিলেম [ Kichu Bolbo Bole Eshechilam ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- আজি বরিষন মুখরিত [ Aji Borishono Mukhorito ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- মনে হল যেন [ Mone Holo Jeno ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)
- আঁধার অম্বরে প্রচণ্ড [ Adhar Ambare Prachanda ] – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (প্রকৃতি)