প্রশ্ন (Proshno) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু (১৯০৩) কাব্যগ্রন্থের একটি কৌতূহলমিশ্রিত শিশু-কবিতা। এতে এক শিশুর কল্পনা ও যুক্তি দিয়ে সময়ের ব্যাখ্যা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার মনোরম চিত্র ফুটে উঠেছে।
Table of Contents
কবিতার মৌলিক তথ্য
কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)
কবিতার নাম: প্রশ্ন
প্রকাশকাল: ১৯০৩
বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: শিশু-কল্পনা, প্রশ্নপ্রবণতা, সময়ের ব্যাখ্যা
প্রশ্ন – কবিতার পাঠ
মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল্,
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা।
এখন আমি তোমার ঘরে ব’সে
করব শুধু পড়া-পড়া খেলা।
তুমি বলছ দুপুর এখন সবে,
নাহয় যেন সত্যি হল তাই,
একদিনও কি দুপুরবেলা হলে
বিকেল হল মনে করতে নাই?
আমি তো বেশ ভাবতে পারি মনে
সুয্যি ডুবে গেছে মাঠের শেষে,
বাগ্দি-বুড়ি চুবড়ি ভরে নিয়ে
শাক তুলেছে পুকুর-ধারে এসে।
আঁধার হল মাদার-গাছের তলা,
কালি হয়ে এল দিঘির জল,
হাটের থেকে সবাই এল ফিরে,
মাঠের থেকে এল চাষির দল।
মনে কর্-না উঠল সাঁঝের তারা,
মনে কর্-না সন্ধে হল যেন।
রাতের বেলা দুপুর যদি হয়
দুপুর বেলা রাত হবে না কেন।
ভাবার্থ
কবিতায় একটি শিশুর মায়ের কাছে ছুটি চাওয়ার মনোজগত ফুটে উঠেছে। সে চায় দুপুরবেলাতেই যেন বিকেলের বা রাতের অনুভূতি তৈরি হয়। কল্পনায় সূর্যাস্ত, গোধূলি, সন্ধার তারা, গ্রাম্য দৃশ্য সবই সে মনে আঁকতে পারে, যেন সময়ের বাস্তব ধারাকে নিজের মত করে বদলে দিতে পারে। এই কবিতা শিশুমনের স্বাধীন কল্পনাশক্তি ও যুক্তির ভিন্ন মাত্রা তুলে ধরে।
শব্দার্থ
চুবড়ি: বাঁশ বা খড় দিয়ে তৈরি ঝুঁড়ি
মাদার-গাছ: এক প্রকার ঔষধি উদ্ভিদ, যার গাছ ছায়া দেয়
দিঘি: বড় পুকুর
বাগ্দি-বুড়ি: বাগ্দি সম্প্রদায়ের বয়স্কা নারী
সাঁঝের তারা: সন্ধ্যাবেলায় আকাশে দেখা প্রথম উজ্জ্বল তারা