বিচ্ছেদের শান্তি কবিতা । bichchheder shasti kobita | মানসী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিচ্ছেদের শান্তি কবিতা [bichchheder shasti kobita ] টি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর মানসী  কাব্যগ্রন্থের অংশ।

কাব্যগ্রন্থের নামঃ মানসী 

কবিতার নামঃ বিচ্ছেদের শান্তি 

বিচ্ছেদের শান্তি কবিতা । bichchheder shasti kobita | মানসী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

বিচ্ছেদের শান্তি কবিতা । bichchheder shasti kobita | মানসী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সেই ভালো, তবে তুমি যাও।

          তবে আর কেন মিছে করুণনয়নে

             আমার মুখের পানে চাও?

      এ চোখে ভাসিছে জল,  এ শুধু মায়ার ছল,

              কেন কাঁদি তাও নাহি জানি।

      নীরব আঁধার রাতি,   তারকার ম্লান ভাতি

             মোহ আনে বিদায়ের বাণী।

      নিশিশেষে দিবালোকে    এ জল রবে না চোখে,

                শান্ত হবে অধীর হৃদয়–

      জাগ্রত জগৎ-মাঝে   ধাইব আপন কাজে,

                 কাঁদিবার রবে না সময়।

      দেখেছি অনেক দিন   বন্ধন হয়েছে ক্ষীণ

           ছেঁড় নাই করুণার বশে।

      গানে লাগিত না সুর,   কাছে থেকে ছিলে দূর,

           যাও নাই কেবল আলসে।

      পরান ধরিয়া তবু   পারিতাম না তো কভু

           তোমা ছেড়ে করিতে গমন।

      প্রাণপণে কাছে থাকি    দেখিতাম মেলি আঁখি

           পলে পলে প্রেমের মরণ।

      তুমি তো আপনা হতে    এসেছ বিদায় ল’তে–

           সেই ভালো, তবে তুমি যাও।

 

বিচ্ছেদের শান্তি কবিতা । bichchheder shasti kobita | মানসী কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [ Rabindranath Tagore ]

      যে প্রেমেতে এত ভয়    এত দুঃখ লেগে রয়

           সে বন্ধন তুমি ছিঁড়ে দাও।

      আমি রহি এক ধারে,    তুমি যাও পরপারে,

                মাঝখানে বহুক বিস্মৃতি–

    একেবারে ভুলে যেয়ো,   শত গুণে ভালো সেও,

                ভালো নয় প্রেমের বিকৃতি।

      কে বলে যায় না ভোলা!    মরণের দ্বার খোলা,

                সকলেরই আছে সমাপন।

      নিবে যায় দাবানল,    শুকায় সমুদ্রজল,

                থেমে যায় ঝটিকার রণ।

      থাকে শুধু মহা শান্তি,   মৃত্যুর শ্যামল কান্তি,

                জীবনের অনন্ত নির্ঝর–

      শত সুখ দুঃখ দ’লে    কালচক্র যায় চলে,

                রেখা পড়ে যুগ-যুগান্তর।

      যেখানে যে এসে পড়ে,    আপনার কাজ করে,

                সহস্র জীবন-মাঝে মিশে,

      কত যায় কত থাকে,    কত ভোলে কত রাখে,

                চলে যায় বিষাদে হরিষে।

      তুমি আমি যাব দূরে–      তবুও জগৎ ঘুরে,

                চন্দ্র সূর্য জাগে অবিরল,

      থাকে সুখ দুঃখ লাজ,   থাকে শত শত কাজ,

                এ জীবন হয় না নিষ্ফল।

      মিছে কেন কাটে কাল,    ছিঁড়ে দাও স্বপ্নজাল,

                চেতনার বেদনা জাগাও–

      নূতন আশ্রয়-ঠাঁই,    দেখি পাই কি না পাই–

                সেই ভালো তবে তুমি যাও।

আরও দেখুনঃ

যোগাযোগ

স্মরণ কবিতা | soron kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পলায়নী কবিতা | polayoni kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অমর্ত কবিতা | omotro kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যাবার মুখে কবিতা | jabar mukhe kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পত্রোত্তর কবিতা | potrottor kobita | সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মন্তব্য করুন