শিশু কাব্যগ্রন্থের বিচ্ছেদ কবিতা । শিশু । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । Bichchhed Kobita

বিচ্ছেদ (Bichchhed) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশু কাব্যগ্রন্থের একটি হৃদয়স্পর্শী কবিতা, যা ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয়। এখানে কবি অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে প্রিয়জনের বিচ্ছেদের বেদনা ও স্মৃতির আবেশ ফুটিয়ে তুলেছেন। ফুল, সকাল, বৃষ্টি—প্রকৃতির নানা উপাদান এই অভাব ও শূন্যতার অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তোলে।

কবিতার মৌলিক তথ্য

  • কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

  • কাব্যগ্রন্থ: শিশু (১৯০৩)

  • কবিতার নাম: বিচ্ছেদ

  • প্রকাশকাল: ১৯০৩

  • বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি: বিচ্ছেদ, স্মৃতি, শূন্যতা

 

 

বিচ্ছেদ – কবিতার পাঠ

বাগানে ওই দুটো গাছে
ফুল ফুটেছে কত যে,
ফুলের গন্ধে মনে পড়ে
ছিল ফুলের মতো যে।

ফুল যে দিত ফুলের সঙ্গে
আপন সুধা মাখায়ে,
সকাল হত সকাল বেলায়
যাহার পানে তাকায়ে,

সেই আমাদের ঘরের মেয়ে
সে গেছে আজ প্রবাসে,
নিয়ে গেছে এখান থেকে
সকাল বেলার শোভা সে।

একটুখানি মেয়ে আমার
কত যুগের পুণ্য যে,
একটুখানি সরে গেছে
কতখানিই শূন্য যে।

বিষ্টি পড়ে টুপুর টুপুর,
মেঘ করেছে আকাশে,
উষার রাঙা মুখখানি আজ
কেমন যেন ফ্যাকাশে।

বাড়িতে যে কেউ কোথা নেই,
দুয়োরগুলো ভেজানো,
ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়াই
ঘরে আছে কে যেন।

ময়নাটি ওই চুপটি করে
ঝিমোচ্ছে সেই খাঁচাতে,
ভুলে গেছে নেচে নেচে
পুচ্ছটি তার নাচাতে।

ঘরের-কোণে আপন-মনে
শূন্য প’ড়ে বিছানা,
কার তরে সে কেঁদে মরে —
সে কল্পনা মিছা না।

বইগুলো সব ছড়িয়ে আছে,
নাম লেখা তায় কার গো।
এম্‌নি তারা রবে কি হায়,
খুলবে না কেউ আর গো।

এটা আছে সেটা আছে
অভাব কিছু নেই তো —
স্মরণ করে দেয় রে যারে
থাকে নাকো সেই তো।

ভাবার্থ

এই কবিতায় কবি গভীর আবেগে প্রিয়জনের বিদায়ের বেদনা ব্যক্ত করেছেন। ঘরের প্রতিটি বস্তু, বাগানের ফুল, সকালের রোদ—সবকিছু যেন সেই মানুষটির অনুপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয়। কবি উপলব্ধি করেন, জিনিসপত্র ঠিকই আছে, কিন্তু যিনি সেগুলোকে অর্থপূর্ণ করতেন, তিনি নেই। এই শূন্যতা ও স্মৃতির মিশ্র অনুভূতিই কবিতার মূল সুর।

শব্দার্থ

  • প্রবাস: নিজের আবাসভূমি থেকে দূরে অবস্থান

  • শোভা: সৌন্দর্য

  • বিষ্টি: বৃষ্টি

  • দুয়োর: দরজা

  • ময়নাটি: একটি পোষা পাখি (ময়না)

  • পুচ্ছ: লেজ

  • মিছা: মিথ্যা

মন্তব্য করুন