ভগ্নহৃদয় ত্রয়োবিংশ সর্গ bhagno hriday troyobingso sorgo[ কবিতা ]
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ : ভগ্নহৃদয়
কবিতার শিরোনামঃ ভগ্নহৃদয় ত্রয়োবিংশ সর্গ
ভগ্নহৃদয় ত্রয়োবিংশ সর্গ bhagno hriday troyobingso sorgo[ কবিতা ]- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবি
মুরলা কোথায়?
সে বালা কোথায় গেল? কোথায়? কোথায়?
সন্ধ্যা হয়ে এল ওই, কিন্তু রে মুরলা কই?
খুঁজে খুঁজে ভ্রমি তারে হেথায় হোথায়?
সে মোর সন্ধ্যার দীপ, কোথা গেল বল্!
একটি আঁধার ঘরে একাকী সে জ্বলিত রে
সন্ধ্যার দীপের মত বিষণ্ন উজ্জ্বল।
সন্ধ্যা হ’লে ধীরে ধীরে আসিতাম ঘরে ফিরে
শ্রান্ত পদক্ষেপে অতি মৃদু গান গেয়ে,
সুদূর প্রান্তর হয়ে দেখিতাম চেয়ে–
মোর সে বিজন ঘরে শূন্য বাতায়ন-‘ পরে
একটি সন্ধ্যার দীপ আলো করে আছে–
আমারি– আমারি তরে পথ চেয়ে আছে–
আমারেই স্নেহভরে ডাকিতেছে কাছে।
হা মুরলা, কোথা গেলি, মুরলা আমার?
ওই দেখ্ ক্রমশই বাড়িছে আঁধার!
সমস্ত দিনের পরে কবি তোর এল ঘরে–
প্রশান্ত মুখানি কেন দেখি না তোমার?
ওই ত দ্বারের কাছে দীপটি জ্বালানো আছে,
আসন আমার ওই রেখেছিল পেতে–
আমি ভালবাসি ব’লে যতনে আনিয়া তুলে
রজনীগন্ধার মালা দিয়েছিস গেঁথে!
কিন্তু রে দেখি না কেন তোর মুখখানি?
শত শত বার ক’রে ভ্রমিতেছি ঘরে ঘরে–
কোথাও বসিতে নারি, শান্তি নাহি মানি!
হুহু করি উঠিতেছে সন্ধ্যার বাতাস,
প্রতি ঘরে ভ্রমিতেছে করি হাহুতাশ!
কাঁপে দীপাশিখা তাহে,নিভিয়া যাইতে চাহে–
প্রাচীরে চমকি উঠে ছায়ার আঁধার!
সে মুখ দেখি নে কেন?সে স্বর শুনি নে কেন?
প্রাণের ভিতরে কেন করে হাহাকার?
জানি না হৃদয়খানা ফাটিয়া কেন রে
আঁখি হতে শতধারে অশ্রুবারি ঝরে?
কে যেন প্রাণের কাছে কি-জানি-কি বলিতেছে,
কি-জানি-কি ভাবিতেছি ভাবিয়া না পাই!
কোথা যাই– কোথা যাই–বল্ কোথা যাই!
মুরলা রে–মুরলা, কোথায়?
কোথায় গেলি রে বালা? কোথায়? কোথায়?
[চপলার প্রবেশ]
চপলা।
কবি গো, কোথায় গেল মুরলা আমার?
দারুণ মনের জ্বালা আর সহিল না বালা–
বুঝি চ’লে গেল তাই, ফিরিবে না আর!
বুঝি সে মুরলা মোর, সমস্ত হৃদয়
তোমারে সঁপিয়াছিল– আর কারে নয়।
বুঝি বা সে ভাল ক’রে পেলে না আদর,
কাঁদিয়া চলিয়া গেল দুর দেশান্তর।
চল কবি, মুরলারে খুঁজিবারে যাই–
আরেকটি বার যদি তার দেখা পাই,
ভাল ক’রে তারে তুমি করিও যতন,
কবি গো কহিও তারে স্নেহের বচন।
করুণ মুখানি তার বুকে তুলে নিও,
অশ্রুজলধারা তার মুছাইয়া দিও!
আরও পড়ুনঃ